দর্শনের জগতে ইমাম আল-গাজালী এমন একজন ব্যক্তিত্ব, যাঁর চিন্তাধারা প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য—উভয় সমাজকেই প্রভাবিত করেছে। তাঁর অমর সৃষ্টি "এহ্ইয়াউ উলুমিদ্দীন" কেবল একটি ধর্মীয় গ্রন্থ নয়, বরং এটি মানুষের মনস্তত্ত্ব, নৈতিকতা এবং আধ্যাত্মিক দর্শনের এক পূর্ণাঙ্গ বিশ্বকোষ।
বইটির মূল লক্ষ্য:
'এহ্ইয়া' শব্দের অর্থ পুনর্জীবন। ইমাম গাজালী যখন দেখলেন সমকালীন সমাজে মানুষের জ্ঞান কেবল বাহ্যিক আচার-সর্বস্ব হয়ে পড়ছে এবং অন্তরের আধ্যাত্মিকতা হারিয়ে যাচ্ছে, তখন তিনি এই গ্রন্থটি রচনার উদ্যোগ নেন। এর মূল লক্ষ্য হলো মানুষের মৃতপ্রায় হৃদয়কে জ্ঞানের আলোয় পুনরায় জীবিত করা।
বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্য:
বইটি মূলত চারটি প্রধান খণ্ডে বিভক্ত। প্রথম খণ্ডে ইবাদত বা উপাসনার নিগূঢ় রহস্য আলোচনা করা হয়েছে। দ্বিতীয় খণ্ডে দৈনন্দিন জীবনের আচার-আচরণ ও সমাজ দর্শনের কথা বলা হয়েছে। তৃতীয় ও চতুর্থ খণ্ডটি সবচেয়ে আকর্ষণীয়, যেখানে মানুষের মনের ধ্বংসাত্মক ব্যাধি (যেমন—অহংকার, হিংসা) এবং মুক্তিদায়ক গুণাবলী (যেমন—ধৈর্য, শুকরিয়া, ভালোবাসা) নিয়ে দার্শনিক বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
কেন এটি একটি দর্শন গ্রন্থ?
গাজালী এখানে কেবল 'কী করতে হবে' তা বলেননি, বরং 'কেন করতে হবে' তার যৌক্তিক ও দার্শনিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। মানুষের নফস বা আত্মা কীভাবে কাজ করে, ইচ্ছাশক্তির উৎস কী এবং পরম সত্যের সাথে মানুষের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত—এই গভীর প্রশ্নগুলোর উত্তর তিনি অত্যন্ত চমৎকারভাবে দিয়েছেন।
কেন "এহ্ইয়াউ উলুমিদ্দীন" পড়বেন?
১. আত্মার খোরাক: আধুনিক যুগের মানসিক অস্থিরতা ও বিষণ্ণতা দূর করতে এই বইটির আধ্যাত্মিক দর্শন দারুণ কার্যকর।
২. নৈতিক উৎকর্ষ: উন্নত চরিত্র গঠনের জন্য এর চেয়ে সমৃদ্ধ গাইডলাইন খুব কমই আছে।
৩. গভীর জীবনবোধ: জীবন এবং জগতের প্রকৃত উদ্দেশ্য বুঝতে এটি পাঠকদের নতুন এক দৃষ্টিভঙ্গি দান করে।
bnebooks-এর পাঠকদের জন্য শেষ কথা:
আপনি যদি দর্শনের গভীরে প্রবেশ করতে চান এবং নিজের ভেতরকার জগতকে নতুন করে আবিষ্কার করতে চান, তবে "এহ্ইয়াউ উলুমিদ্দীন" আপনার সংগ্রহে থাকা জরুরি। এটি এমন একটি বই যা আপনার জীবন দেখার ধরণ বদলে দিতে পারে।

