বাংলা কথাসাহিত্যের জাদুকর হুমায়ূন আহমেদের প্রথম উপন্যাস 'নন্দিত নরকে'। ১৯৭২ সালে প্রকাশিত এই ছোট্ট অথচ শক্তিশালী বইটি প্রকাশের পর থেকেই পাঠক ও সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়ে আসছে। একটি সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের দৈনন্দিন হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা এবং শেষমেশ এক চরম ট্র্যাজেডি কীভাবে জীবনকে ওলটপালট করে দেয়, তারই এক নিখুঁত চিত্রায়ন এই উপন্যাস।
কাহিনীর প্রেক্ষাপট:
উপন্যাসটির কাহিনী আবর্তিত হয়েছে একটি মধ্যবিত্ত পরিবারকে কেন্দ্র করে। পরিবারের বড় মেয়ে রাবেয়া, যে মানসিকভাবে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও তাঁর সারল্য আর মমতা দিয়ে পুরো পরিবারকে আগলে রাখে। অভাবের সংসারে বাবা, মা আর ভাইবোনদের নিয়ে গড়ে ওঠা এই ছোট জগতের কথক রাবেয়ার ছোট ভাই খোকা। গল্পটি শুরু হয় খুব সাধারণ ঘরোয়া আবহে, কিন্তু ধীরে ধীরে তা এক গভীর সংকটের দিকে মোড় নেয়।
চরিত্রের গভীরতা:
হুমায়ূন আহমেদ খুব সাধারণ চরিত্রের ভেতরেও অসাধারণত্ব ফুটিয়ে তুলতে পারতেন। রাবেয়া চরিত্রটি পাঠকদের মনে এক গভীর ক্ষত তৈরি করে। অন্যদিকে, পরিবারের সদস্যদের একে অপরের প্রতি যে টান এবং সামাজিক প্রতিকূলতার মুখে তাঁদের অসহায়ত্ব—সব মিলিয়ে চরিত্রগুলো জীবন্ত হয়ে উঠেছে। উপন্যাসের প্রতিটি বাঁকে লুকিয়ে আছে মধ্যবিত্ত সমাজের মূল্যবোধ আর সীমাবদ্ধতার গল্প।
শৈল্পিক সার্থকতা:
'নন্দিত নরকে' বইটির বিশেষত্ব হলো এর মেদহীন ও প্রাঞ্জল ভাষা। হুমায়ূন আহমেদ কোনো জটিল শব্দ ব্যবহার না করেই মানুষের হৃদয়ের গভীরে পৌঁছে গেছেন। বইটির নামটির মধ্যেই এক ধরণের বৈপরীত্য আছে—নরক যখন প্রিয়জনদের উপস্থিতিতে 'নন্দিত' হয়ে ওঠে। জীবনের রূঢ় বাস্তবতা কীভাবে মানুষের স্বপ্নগুলোকে দুমড়ে-মুচড়ে দেয়, তা এই বইটির মূল উপজীব্য।
কেন এই বইটি পড়বেন?
১. হুমায়ূন আহমেদের শুরু: যদি আপনি হুমায়ূন আহমেদের লেখার ভক্ত হয়ে থাকেন, তবে তাঁর লেখক জীবনের প্রথম এই কাজটির মাধ্যমে তাঁর সৃষ্টির শেকড় খুঁজে পাবেন।
২. আবেগীয় সংযোগ: এটি এমন একটি গল্প যা আপনাকে কাঁদাবে, হাসাবে এবং শেষ পর্যন্ত এক গভীর শূন্যতায় আচ্ছন্ন করে রাখবে।
৩. বাস্তবসম্মত চিত্রায়ন: মধ্যবিত্ত বাঙালি সমাজের এক কালজয়ী দলিল হিসেবে এই বইটি অনন্য।
bnebooks-এর পাঠকদের জন্য শেষ কথা:
যারা অল্প কথায় গভীর জীবনবোধের গল্প পড়তে ভালোবাসেন, তাঁদের জন্য 'নন্দিত নরকে' একটি মাস্টারপিস। এটি কেবল একটি উপন্যাস নয়, বরং আমাদের সমাজেরই এক লুকানো আয়না।


ডাউনলোড হচ্ছে না
ReplyDeleteNo
Delete