বই রিভিউঃ The Perks of Being a Wallflower
লেখকঃ Stephen Chbosky
৯০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে লেখা Stephen Chbosky’র প্রথম বই “The Perks of Being a Wallflower” । খুব সোজা-সাপ্টা একটা বই; আপাতদৃষ্টিতে নিতান্তই উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েদের জন্য লেখা খুব সাধারণ একটা গল্প । তবু শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মুগ্ধতা ধরে রাখার কিছু অদ্ভূত উপাদান রয়েছে এতে ।
Wallflower মানে হল দেয়ালের গা বেয়ে বেড়ে উঠা লতা-গুল্ম । খুব ছোট্ট আর সামান্য; দেয়ালের আশ্রয়ে যার বেঁচে থাকা । কিছু কিছু মানুষ যেন ঠিক এরকম । দেয়াল বেয়ে জড়িয়ে কোনরকমে অস্তিত্ব ধরে রাখা ফুলের মতই লাজুক, আত্মকেন্দ্রিক, স্বল্পভাষী কিন্তু হয়ত ভিন্নধর্মী একটা দৃষ্টিকোণ থেকে সবকিছু বিচার করার এক অনন্য ক্ষমতা রয়েছে তাদের । শুধু ‘দেখা’ কে ছাড়িয়েও বিস্তৃত একটা ‘পর্যবেক্ষণ’ ক্ষমতা তাদের আলাদা করে আর দশজন থেকে ।
চুপচাপ, লাজুক আর শান্ত… হয়ত ১৫ বছর বয়সী আর দশটা ছেলের ভীড়ে চোখেই পড়বে না…এই হচ্ছে চার্লি । এই গল্পের Wallflower ।
চার্লি খুব আবেগপ্রবণ একটা ছেলে । কারণে অকারণে কান্না পায় তার । কিন্তু পৃথিবীটাকে সে এমন একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে দেখে, যেখানে দাঁড়ালে কেউ হয়ত তাকে দেখতে পায় না । সে কথা বলে খুব কম কিন্তু ভাবে তার চেয়ে অনেক বেশী । বাবা-মা তার কাছে বন্ধুর মত, যাদের নিজেদের শৈশব খুব সুখের ছিল না । তাই তিন সন্তানের সুন্দর জীবন নিশ্চিত করতে তাঁরা নিবেদিতপ্রাণ ।
কিন্তু তবু চার্লির জীবনে দুঃস্বপ্নরা আঁচড় কাটে । ছোটবেলায় সে আন্ট হেলেনকে হারায় । সে বিভীষিকা থেকে বের হয়ে আসা হয়না তার । হাইস্কুল শুরুর আগের বছর তার এক মাত্র বন্ধু মাইকেল আত্মহত্যা করে । এসব কারণে হাইস্কুলটাও হয়ত খুব সুখের হত না । কিন্তু এমন সময় সে দেখা পায় দুই বন্ধুর- প্যাট্রিক আর স্যাম । চার্লির চেয়ে বয়সে বড় দুই সৎ ভাই-বোন । চার্লির মতে, তার দেখা শ্রেষ্ঠ দুজন মানুষ । ‘দেয়ালের ফুল’কে যেন ওরা এনে দাঁড় করায় এক অজানা পৃথিবীর সামনে । বয়ঃসন্ধির জোয়ারে নিজের আবেগগুলো সামলে উঠতে বেগ পেতে হয় চার্লিকে । মিক্সড টেপ আর গল্পের বই নিয়ে মেতে থাকা চার্লি পরিচিত হয় স্মোকিং, ড্রিংকিং, ড্রাগস আর এমন সব বিষয়ের সাথে যা তার কাছে ছিল একেবারেই অজানা । ভালবাসা, হতাশা, অপরাধবোধ, মানসিক অস্থিরতা… হাইস্কুলের একটা ছেলে বা মেয়ে যেসব সমস্যার সম্মুখীন হয় এবং যে মানসিক অবস্থার মধ্যে দিয়ে যায়, সে ব্যাপারগুলো খুব পরিষ্কারভাবে এই বইয়ে উঠে এসেছে ।
বইটার সবচেয়ে সুন্দর দিক হল সাধারণ একটা গল্পকে খুব অসাধারণ করে পাঠকের সামনে তুলে ধরা । যা রোজ দেখছি সেটাকেই একটু ভিন্নভাবে দেখা । বইটা পড়ার সময় ঠিক চার্লির মত করেই ভাবতে ইছা করে…যে গানগুলো আমরা এই মুহুর্তে শুনছি তা আরো কত মানুষ শুনে এসেছে ! তাদের কত অনুভূতি এই গানগুলোর সাথে জড়িয়ে আছে । চার্লির মত করেই বলতে ইচ্ছা করে- আমরা “Infinite” ।
বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৯৯ এর ফেব্রুয়ারীতে।আরপ্রকাশের সাথে সাথেই জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌছে।লেখক Stephen Chbosky বইটির বেশীর ভাগ চরিত্রকেই গড়েছেন তার চেনা পরিচিত মানুষের আদলে।তবে টিন-এজ ক্রাইম এবং ড্রাগের ব্যবহার এ ব্যাপার গুলো খোলামেলা ভাবে দেখানোর কারনে লেখককে কিছুটা বিতর্কের মধ্যেও পড়তে হয়।আবার উৎসাহ,অনুপ্রেরণা…আত্মহত্যার চেয়ে জীবন কে বেছে নেয়া অনেক সহজ আর আশা ও হতাশার মধ্যে আশাই শ্রেষ্ঠ,আশাই জয়ী…এই অন্তর্নিহিত কথা গুলোর জন্য বইটি পাঠক হৃদয়ে স্থান ও করে নেয় খুব অল্প সময়ের মধ্যেই।
আশা করছি বইটা সবার ভাল লাগবে ।
0 Comments