Ad Code

Responsive Advertisement

বুক রিভিইউ: জলেশ্বরী - ওবায়েদ হক

লিখেছেন: রাহাত খান
বই পর্যালোচনা: জলেশ্বরী
বইয়ের লেখক: ওবায়েদ হক
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১৪৪
মুদ্রিত মূল্য: ২০০ টাকা
জলেশ্বরী
রিভিইউ ও ছবি: রাহাত খান

কাজল। একটা ভুলের শাস্তি হিসেবে তার বাবা মাহাতাব ভূঁইয়া তাকে পড়াশুনার জন্য লঞ্জ অ্যাঞ্জেলসে পাঠিয়ে দেয়। তার বাবার অগাধ সম্পদ ও প্রতিপত্তি।
ক্ষমতাও ছিলো প্রবল।নয় বছর পর একদিন হঠাৎ ভূমিকম্পের মত তার কাছে খবর অাসে তার বাবা ছয় তলার ছাদ থেকে মাথা ঘুরে পড়ে গত হয়েছেন। সে তৎক্ষনাৎ বাবার শোকে দেশে ফিরে অাসে। একদিন তার বাবার টেবিলের ওয়ারড্রব থেকে একটা চিরকুট অাবিষ্কার করে। তাতে লেখা, "জলেশ্বরী গ্রামের ইব্রাহিম গাজী অামাকে ঘুমাতে দেয় না। মাঝে মাঝে মনে হয় লাফিয়ে পড়ি ছাদ থেকে।" তার অার বুঝতে বাকি রইলো না তার বাবা অাত্তহত্যা করেছে। কিন্তু কে এই ইব্রাহিম গাজী? যে তার কাছ থেকে বাবাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। সে নৌকাযোগে খুজতে বের হয় জলেশ্বরী গ্রাম অার ইব্রাহিম গাজীকে। সাথে করে নেয় দুজন মাঝি বজলু,লিয়াকত অার টাকাভর্তি সুটকেস। তখন ১৯৮৮ সালের বন্যা শেষ হয়েছে। নদীর দুকূলের গ্রামগুলোকে গোগ্রাসে খেয়ে মানুষজনকে বাসহীন করেছে। চারিদিকে মানুষের হাহাকার। নদীতে লাশ ভাসছে। কেউ কাছেও যায় না। চারিদিকে শুধু মানুষের চিৎকার, অার্তনাত। ক্ষুধার জ্বালায় টাকার জন্য বাবা নিজের মেয়েকে পর্যন্তু বিক্রি করবার চায়। এই নতুন ভয়ংকর দৃশ্য তাকে জীবনকে নতুন ভাবে দেখতে, ভাবতে শিখায়। একদিন রাতে তার বিশ্বস্ত দুজন মাঝি লোভে পড়ে তাকে অাহত করে সুটকেস নিয়ে পালিয়ে যায়। তাকে রেখে যায় নদীর বুকে গড়ে ওঠা নবীন চরে। চারিদিক জনশূন্য। চরের বুকে একটা গাছে অাশ্রয় নিতে গিয়ে অাগন্তুকের মত অাবিষ্কার হয় তাপসী নামে একজন মহিলা। সেখানে কয়েকরাত কাটানোর পর একদিন ভোরে তাদের উদ্ধার করে বাঈদানীরা। তারা তাদের নৌকায় অাশ্রয় দেয়। এরপর তারা রওয়ানা দেয় জলেশ্বরী গ্রামের উদ্দেশ্যে। বন্যা শেষে গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে কলেরা নামক দূরারোগ্য রোগ। চারিদিক লাশের গন্ধে বাতাস ভারী হয়ে অাসে।একদিন বেদেদের সর্দার মেকু ও বুজি মারা গেলে নতুন সর্দার তাকে নৌকা থেকে বের করে দেয়। কিন্তু তারা তাপসীকে রেখে দেয়। তাপসীকে কাজল সাথে করে নিতে চাইলেও সে রাজি হয়নি ভাগ্যের কাছে অসহায়ত্বের কারনে। সে একা পায়ে হেটে রওয়ানা দেয় জলেশ্বরীর উদ্দেশ্যে। পথিমধ্যে দেখা হয় অাসাদ পাগলা নামে এক মুক্তিযোদ্ধার সাথে। যে যুদ্ধের সময় লাশ দাফন করার সুবাদে স্বাধীনতার পর অার এ পেশা ছাড়িতে পারেন নাই। সে গ্রামান্তর হেঁটে বেড়ায় অার লাশ দাফন করে। কাজলও এখন তার কাজে সাহায্য করে। হঠাৎ কলেরায় অাক্রান্ত অাসাদ পাগলা মারা যান। কাজল একাই তার লাশ দাফন করে। কাজল হাঁটতে হাঁটতে তার কাঙ্খিত গ্রামে চলে অাসে। ঘটনাক্রমে সেই তাপসীর সাথে তার অাবার সাক্ষাত হয়। তাপসীকে হঠাৎ করে কলেরায় অাক্রমন করে। রাতে নৌকায় করে তাকে সদর হাসপাতালের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। পথিমধ্যে ডাকাতরা তাদের উপর অাক্রমন করে। তাকে চোখ বেঁধে ঘরের মধ্যে অাবদ্ধ করে রাখে। পরের দিন ভোরে চোখ মেলে দেখে তার সামনে ডাকাত দল অার সেই লিয়াকত অার বজলু। তারা কাজলকে হত্যা করবে বলে মনস্থির করলো।
কাজল কি তাদের কাছে পরিত্রান পেয়েছিলো, ইব্রাহিম গাজীকে খুজে পেয়েছিল, তাপসীর কি হলো?
এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে পড়ে ফেলুন অসাধারন এই উপন্যাসটি।

পাঠ প্রতিক্রিয়া: ওবায়েদ হকের প্রথম লেখা পড়া। এক কথায় অসাধারন লেগেছে। ১৯৮৮ সালের বন্যা না দেখলেও তার লেখনীতে যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তাতে চোখের সামনে ভেসে ওঠে সে ভয়ংকর, বিভৎস দৃশ্য। পানির কাছে মানুষ কতটা অসহায়। শেষটা অসাধারন হয়েছে।

Post a Comment

0 Comments

Close Menu