বইঃ অমানিশা
সিরিজঃ মাসুদ রানা
লেখকঃ কাজী আনোয়ার হোসেন।
প্রকাশনীঃ সেবা প্রকাশনী
প্রকাশকালঃ ১৯৯৭
|
বুক রিভিইউ |
রিভিউঃ
সপ্তাহ দুয়েক হলো মাসুদ রানা একদম বেকার বসে আছে আমেরিকার নিউ ইয়র্কে।বি. সি. আই চীফ মেজর জেনারেল (অব.) রাহাত খান একরকম জোড় করেই ছুটি কাটানোর কথা বলে বসিয়ে রেখেছেন রানাকে নিউ ইয়র্কে।আসলে স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে ওকে। একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজে দরকার ওকে যে কোনও সময়।বসে থেকে থেকে বিরক্তির চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে রানা।
সপ্তাহ তিনেক আগে এক মারাত্মক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিল বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স এর ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ার স্বপন সাহা।অত্যন্ত প্রতিভাবান ছেলে ছিল স্বপন। এই বিষয়ে আরও উচ্চতর ট্রেনিংএর নিউ ইয়র্কে পাঠানো হয় ওকে।
"বেল্ট এয়ার" এ স্বপনের উচ্চতর ট্রেনিংএর বিষয়টা ছিল আসলে ভুয়া।ওদের সিকিউরিটি ইনচার্জ ছিল সে।বছর তিনেক আগে বেল্ট এয়ার কর্তৃপক্ষের সন্দেহ জাগে যে, তাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর কিছু ইলেক্ট্রনিক কম্পোনেন্টের নির্মান সম্পর্কিত একান্ত গোপনীয় তথ্য ফাঁস হচ্ছে, কোম্পানির উঁচু পদের কেউ এর সাথে জড়িত।সেজন্যে তারা রানা এজেন্সির শরণাপন্ন হয়।এমন একজন সিকিউরিটি ইনচার্জ চায় তারা যে একই সাথে ইলেক্ট্রনিক্স এর উপরও সমান দক্ষ।তাই স্বপন সাহা কে পাঠায় রানা।
এদিকে হঠাৎ একদিন রানাকে অনুসরন করে ওর কাছে হাজির হয় বেল্ট এয়ারেরই আরেক কর্মচারি লিলি টরনি।নিজেকে স্বপনের গার্লফ্রেন্ড দাবি করে সে।তার কাছে রানা জানতে পারে দুর্ঘটনায় আসলে মারা যায়নি স্বপন।ওটা ছিল সাজানো দুর্ঘটনা।চমকে যায় রানা একথা শুনে।ওর এতোদিনের বন্ধু তাহলে বেচে আছে।লিলির কাছে আরও জানা গেল বেল্ট এয়ারে কাজ করার সময় অনেকটা মনের খেয়ালেই অদ্ভুত একটা জিনিষ তৈরি করেছিল স্বপন।ওটার নাম দিয়েছিল ও বাইপাস-কন্ট্রোলার।
এদেশের আইসিবিএম অর্থাৎ ইন্টার কন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক মিসাইল প্রজেক্টের কাজ হলো শত্রুদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নির্ভুল আঘাত হানার জন্য প্রস্তুত থাকা।এই প্রজেক্টের পুশ বাটন ডিভাইস শুধুমাত্র প্রেসিডেন্টের কাছেই থাকে।একবার ঐ বাটন প্রেস করলে ধ্বংস হয়ে যাবে সব। স্বপন যে বাইপাস-কন্ট্রোলার তৈরি করে ওটা দিয়ে নিয়িন্ত্রন করা যাবে এই পুশ বাটন।মনে মনে ভিষন রকম চমকে উঠে রানা। তার মানে এই যন্ত্র দিয়ে ইচ্ছে করলে যে কেউ নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারবে মার্কিনযুক্তরাষ্ট্র এর মিসাইল সিসটেম।
স্বপন কে অনেকটা উস্কে দিয়ে এই যন্ত্র বানাতে সাহায্য করে আইসিবিএম এর চীফ টেকনেশিয়ান পিটার মার্টিন।তার উদ্দেশ্য ছিল যন্ত্রটা স্বপন কে দিয়ে তৈরি করিয়ে নিয়ে চরা দামে বিক্রি করে দিবে রাশিয়ার কাছে।আর সেজন্যে সে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে স্মরনকালের ভয়ঙ্কর বিপজ্জনক এক চরিত্র সাইলাস হুগো কে।তার আন্ডারগ্রাউন্ড সংগঠনের নাম ব্ল্যাক প্যান্থার।আমেরিকার সবথেকে নামকরা মাফিয়া সংগঠন। স্বপন কিন্তু ঘূর্নাক্ষরেও টের পায়নি যে ওকে ঘিরে কি নোংরা ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে পিটার মার্টিন।
এইদিকে রাশিয়া ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খায়।তারা জানতে পারে পিটার মার্টিন এর সাহায্যে এই ডিভাইস তৈরি করছে স্বপন।তাই সাইলাস হুগো কে পাশ কাটিয়ে তারা সরাসরি যোগাযোগ করে পিটার মার্টিন এর সাথে।বেশি টাকা পাওয়ার লোভে পিটার মার্টিন রাজি হয়ে যায় এবং সাইলাস হুগোর কাছে থেকে স্বপন কে নিয়ে পালিয়ে যায়।
এখবর জানতে পেরে পাগল হওয়ার দশা সি.আই.এ'র।ঘটনাক্রমে সি.আই.এ থেকে রানাকেই দায়িত্ব দেয়া হয় ওদের খুজে বের করার।
স্বপনকে খুজে বের করার মিশনে নামে রানা।একা।কিন্তু ভিতরে ভিতরে ভয় থাকে রানাকে একা দায়িত্ব দিলেও বসে থাকবেনা সি.আই.এ।আর সি.আই.এ রানার আগেই স্বপনের খোঁজ পাওয়া মানে স্বপনের নিশ্চিত মৃত্যু।পিছনে লাগে কেজিবি এবং সাইলাস হুগো।তাদেরও স্বপনকে চাই।
মিশনে নামার পর থেকেই একের পর এক হামলা আসতে থাকে রানার উপর।আস্তে আস্তে রানা জানতে পারল কেজিবি অথবা সাইলাস হুগো ওকে হামলা করছেনা।বরং তারা চায় রানা বেচে থাকুক।কারন রানাই এখন একমাত্র আশা ভরসা।
রানা কি পারবে অদৃশ্য নতুন শত্রু,কেজিবি,সি.আই.এ এবং সাইলাস হুগোর আগেই স্বপনকে খুজে বের করতে।
আমার তো মনে হয় পারবে।
আপনাদের কি মনে হয়?
পারবেনা রানা?
0 Comments