Ad Code

Responsive Advertisement

বুক রিভিইউ: ক্রীতদাসের হাসি

রিভিইউ লিখেছেন: মুহম্মদ খালিদ সাইফুল্লাহ ফয়সাল
ক্রীতদাসের হাসি

বইয়ের নামঃ ক্রীতদাসের হাসি
লেখকঃ শওকত ওসমান
ভাষাঃ বাংলা
ঘরনাঃ চিরায়ত উপন্যাস
বইয়ের পৃষ্ঠাঃ ৮০
বিনিময় মূল্যঃ ৯০ টাকা
প্রকাশনীঃ সময়
ব্যক্তিগত অনুযোগ (রেটিং): ৪.৫/৫
বইটি ডাউনলোড করুন: ক্রীতদাসের হাসি pdf (5.83) mb
“মেহেরজান চলে যাওয়া শুরু করলে ক্রীতদাস তাতারি মুখ খোলে। মেহেরজানকে পিছু ডাক দেন। তারপর খলিফা বলেন, ‘শোন হারুনর রশিদ!’

খলিফাকে যথাযথ সম্মান না জানানোর জন্য সবাই তার উপর খেদোক্তি করে, তার শরীরে শাস্তির কোড়া চলতে থাকে। কিন্তু ক্রীতদাসের তাতে কোনো বিকৃতি আসে না। ক্রীতদাস বলতে থাকে, ‘শোন, হারুনর রশীদ। দিরহাম দৌলত দিয়ে ক্রীতদাস গোলাম কেনা চলে। বান্দী কেনা সম্ভব। কিন্তু-কিন্তু-ক্রীতদাসের হাসি-না-না-না-না। এরপরই তাকে...”

অনিন্দ্য!

শব্দযুগলের স্বার্থকতা আর ব্যক্তিত্বের বহিঃপ্রকাশের এমন চাঞ্চল্যকর লেখা বেয়ে উঠে দেশের অসাড়, মেরুদন্ডহীন শাসকদের বিরুদ্ধে। নষ্ট সময়ের যুদ্ধে, হাহাকারের প্রতিরোধ্যে।

ক্রীতদাসের হাসি বাংলাদেশের বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক শওকত ওসমান এর লেখা উপন্যাস, যেখানে তিনি তৎকালীন সময়ের দোসর শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রণতরী সাজিয়ে লিখেছিলেন।

১৯৬২ সালে তিনি এ উপন্যাসটি রচনা করেন, যার ভাববস্তু, ১৯৫৮ সাল। জেনারেল আইয়ুব খানের সামরিক শাসন পাকিস্তানকে বর্বর স্বৈরশাসনের যাঁতাকলে আবদ্ধ করলো, আর এই চেতনাকে দমন করার জন্য আবার নেমে আসে সামরিক শাসন।

কিন্তু, তবুও লেখকের প্রতিবাদ স্তব্ধ থাকেনি।

সমকালের স্বাধিকার, গনতন্ত্র এবং সর্বপ্রকার মানবিক অধিকার বঞ্চিত মানুষের জীবনের সুপ্ত আকাঙ্ক্ষা সমূহ একত্র হয়েছে শওকত ওসমানের “ক্রীতদাসের হাসি” উপন্যাসের পটভূমিতে।

উপন্যাসের প্রথমে বাগদাদের খলিফা হারুনর রশিদের সহধর্মিনী জুবায়াদা ও বাঁদি মেহেরজানের কথোপকথনে প্রকাশ পায় খলিফার চরিত্রের নিগূঢ় সত্যতা, ঘৃণ্য নির্যাতিত বৈশিষ্ট্য।

বাঁদি মেহেরজানের প্রেমিক হাবসী তাতারী। তাদের এই প্রণয় খলিফার দৃষ্টিগোচর হলে আর রক্ষা নেই। তাই, অতি গোপনে মেহেরজান বেগম জুবায়দার সহায়তায় মেহেরজান প্রেমিকা তাতারীর সাথে মিলিত হয়। এদিকে প্রজা নিপীড়ক খলিফার মন অশান্তিতে পরিপূর্ণ। সে শান্তির সন্ধান করে ফেরে।

মশরুরকে উদ্দেশ্যে বলে, বাগদাদের অধিপতি হওয়া সত্ত্বেও সে বড় একা! খলিফার একাকীত্বের মূলে রয়েছে তার পেছনের স্মৃতি চারণ, নিজের পূর্ব জীবনের আভাসিত কল্পনা।

আর,

এরকম যন্ত্রণাময় অবস্থায় খলিফার কানে আসে ‘মেহেরজান আর তাতারীর’ প্রেমপূর্ণ মিলনের আবেগোচ্ছল হাস্যধ্বনি। নিশ্চুপ ভাবে এই হাসির শব্দ শুনে খলিফা অনুভব করেন, এটা শুধু মাত্র ঠোঁট দিয়ে নির্গত হাসি নয়। এই হাসির উৎস স্থল হৃদয়ের গহীন প্রদেশ।

কেননা, এর ভিতে আছে অন্য কিছু। খলিফার হিংসা হয়। তিনি যেখানে অধিশ্বর হয়েও সুখের কাঙাল, সুখ-শান্তি খোঁজার জন্য তিনি হন্য হয়ে ঘুরছেন, ফিরছেন। আর, সেখানে এক সামান্য ক্রীতদাস কিনা তার সম্মুখে হাসির মাঝে সুখের ঝর্ণা প্রবাহিত হচ্ছে।

নাহ, তা হতে পারে না; হিংসা রূপ নেয় প্রতিহিংসায়! আর এভাবে, রূপকের মধ্য দিয়ে তীব্র হয়ে উঠেছে এই প্রতিবাদ। প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে শওকত ওসমানের ‘ক্রীতদাসের হাসি’র তাতারী।

নিজের ব্যক্তিগত পাঠ প্রতিক্রিয়া লিখতে গেলে উৎফুল্ল সহকারে লেখা যাবে। ১৯৬২ সালে তিনি এ উপন্যাসটি রচনা করেন। ১৯৫৮ সালে জেনারেল আইয়ুব খানের সামরিক শাসন পাকিস্তানকে বর্বর স্বৈরশাসনের যাঁতাকলে আবদ্ধ করলো।

এ সময় সব ধরনের-বাক স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছিল। তৎকালীন পাকিস্থানের স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের শাসন ব্যবস্থাকে ব্যঙ্গ করে এ উপন্যাস রচিত হয়।

এ উপন্যাসের মূল চরিত্র তাতারী। গণতান্ত্রিক চেতনাকে ভয় পায় স্বৈরাচারী শাসক। এই চেতনাকে দমন করার জন্য আবার নেমে আসে সামরিক শাসন। রূপকের মধ্য দিয়ে তীব্র হয়ে উঠেছে এই প্রতিবাদ।

ক্রীতদাস তাতারির প্রাণোচ্ছল হাসি শুনে বিমোহিত খলিফা ভেবেছিলো, তিনি তাতারির হাসি কিনে নিতে পারবেন। সেই চেষ্টায় খলিফা তাতারিকে দাস থেকে মুক্ত করে অঢেল সম্পত্তি প্রদান করলেও কেড়ে নিতে চেয়েছিলেন তাতারির খিলখিল করে হাসি’র কুয়া মেহেরজান কে।

মেহেরজান থেকে আলাদা হয়ে তাতারি কি হাসতে পারে?

পারবে?

প্রশ্নগুলোর উত্তর আর ভালোবাসার এক নতুন হাসি খুঁজে পেতে বইপ্রেমী পাঠকদেরক লেখক শওকত ওসমানের অনবদ্য উপন্যাস পড়ার সাদর আমন্ত্রণ জানাচ্ছি...

Post a Comment

0 Comments

Close Menu