Ad Code

Responsive Advertisement

আরজ আলী সমীপে pdf download

আরজ আলী সমীপে pdf

লেখকঃ আরিফ আজাদ


আরজ আলী সমীপে pdf download
আরজ আলী সমীপে। কভার: ইসলামীবুকহাউজ ডট কম

Others Link
আরজ আলী সমীপে বইটির পিডিএফ লিঙ্ক: 

বই থেকে
উৎসর্গ 
নিশ্চয়ই আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন এবং আমার মরণ সবকিছু শুধুমাত্র বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহ তায়ালার জন্য। 

প্রকাশকের কথা 
বর্তমান সময়ে আমাদের সমাজে যে কয়েকটা জিনিস মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, সেগুলাের মধ্যে একটি হলাে নাস্তিকতা। ধর্মবিদ্বেষ, ধর্মের অপব্যাখ্যাসহ বিভিন্ন কার্যকলাপ দিন দিন যেন বেড়েই চলেছে। ব্লগ, ফেইসবুকসহ সামাজিক যােগাযােগমাধ্যমগুলােতে এসব নিয়ে হরহামেশাই এখন লেখালেখি, তর্কাতর্কি হচ্ছে। শত শত মুসলিম তরুণ এই অপব্যাখ্যা এবং বিদ্বেষের মায়াজালে আবদ্ধ হয়ে ধর্ম থেকে সরে যাচ্ছে। তাদের মনে নানারকম প্রশ্ন, সন্দেহ ঢুকিয়ে দিচ্ছে বিরুদ্ধবাদীরা। বাংলাদেশের নাস্তিকতা-জগতে একটি পরম শ্রদ্ধেয়, উচ্চারিত এবং বহুলপ্রচারিত নাম আরজ আলী মাতুব্বর। জন্মেছেন বরিশালে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও নিজে নিজে স্বশিক্ষিত হয়েছেন বলে জানা যায়। ধর্মের প্রতি একধরনের বিতৃয়া থেকে উনি কলম ধরেছিলেন বলে লােকমুখে শােনা যায়। এই বিতৃয়া থেকে উনি ধর্ম নিয়ে বেশ কিছু আপত্তি, প্রশ্ন এবং সন্দেহ উত্থাপন করেছিলেন। এই প্রশ্নগুলাে নাস্তিকসমাজে বহুলব্যবহৃতও হয়। বাংলা নাস্তিকসমাজের পুরােধা এই লােকের লিখিত বইয়ের জবাব হিসেবে কোনাে বই বাংলা ভাষায় ইতিপূর্বে লিখিত হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। উনার বইপত্র পড়ে যেসব শিক্ষিত যুবক শ্রেণি সন্দেহের বেড়াজালে আটকা পড়ছে, তাদের জন্য আরজ আলী মাতুব্বরের বইয়ের বিপরীতে উনার যুক্তি, প্রশ্নের উত্তর দেওয়াটা ছিল সময়ের একটি অন্যতম দাবি। আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের সময়ের অন্যতম তরুণ লেখক আরিফ আজ কাজটিই হাতে তুলে নিয়েছেন। অবিশ্বাসীদের মৌচাকে তিনি প্রথম চিল ছুড়েছিলেন গত বছরের বইমেলায় প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ লিখে। বিশ্বাসীমহলে বর্তমান জনপ্রিয় এই লেখক এবার আরজ আলী মাতুব্বরের প্রশ্নের জবাবে লিখেছেন, আলী সমীপে। বইটিতে তিনি আরজ আলী মাতুব্বর সাহেবের উত্থাপিত প্রশ্নের জবাব তাে দিয়েছেনই, সাথে ছুড়ে দিয়েছেন পাল্টা প্রশ্নও। এতদিন আরজ আলী মাতুব্বরের বইপত্র পড়ে যারা বিভ্রান্ত হতে, যারা মনে করত আরজ আলী মাতুব্বরের অবস্থান সঠিক এবং প্রশ্নাতীত, লেখক আরিফ আজাদের নতুন বই আরজ আলী সমীপে তাদের নতুন করে ভাবতে বাধ্য করবে বলেই আমাদের বিশ্বাস, ইনশাআল্লাহ। আমরা চেষ্টা করেছি বইটিকে নাস্তিকতার বিপক্ষে, আস্তিকতার পক্ষে একটি দলিল, একটি রেফারেন্স বই হিসেবে উপস্থাপন করতে। শারঈ দৃষ্টিকোণ থেকে যেন কোনাে সমস্যা না থাকে, সে জন্যে আমরা বইটি প্রখ্যাত আলেম দ্বারা শার’ঈ সম্পাদনাও করে নিয়েছি। এরপরও এতে কিছু ভুলত্রুটি থেকে যাওয়া স্বাভাবিক। যেকোনাে ধরনের ভুলত্রুটি যদি বােদ্ধা পাঠকমহলের দৃষ্টিগােচর হয়, আমাদের জানানাের বিশেষ অনুরােধ করছি। আমরা সেটা আন্তরিকভাবে গ্রহণ করব এবং সংশােধন করে নেব, ইনশাআল্লাহ। আমরা লেখক আরিফ আজাদের দীর্ঘায়ু কামনা করি। দ্বীনের জন্য তার মেহনতের বদলা হিসেবে তিনি যেন জান্নাতে উচ্চতর আসন লাভ করতে পারেন, আল্লাহুম্মা আমীন। 

লেখকের কথা
 আলহামদুলিল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন। শুকরিয়া সেই মহান সত্তার, যিনি আমাকে অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্ব দান করেছেন। দরূদ এবং সালাম প্রিয় নবী (সা.) এর প্রতি। বাংলা অন্তর্জালে কিংবা বাংলাসাহিত্যে নাস্তিক্যবাদী লেখাজোখা বলতেই প্রথমে যার নাম চলে আসে তিনি হলেন আরজ আলী মাতুব্বর। নিজের অবিশ্বাসী দর্শনের পক্ষে উনি কিছু বইপত্র লিখেছেন। প্রশ্ন করেছেন। যুক্তি দেখিয়েছেন। প্রশ্ন করতে কার না ভালাে লাগে? মানুষের স্বভাবজাত একটি বৈশিষ্ট্য হলাে এই যে, সে প্রশ্ন করতে পারে। এই ক্ষমতা আছে বলেই সে মানুষ। একটি গরুর সামনে যদি কিছু প্ল্যাস্টিক রাখা হয়, তাহলে গরুটি প্রথমে প্ল্যাস্টিকের গন্ধ শুকবে। এরপর হয়তাে-বা আলতাে করে জিহ্বা দিয়ে একটু পরীক্ষা করবে। যখন দেখবে এই জিনিস তার গলাধঃকরণ করার উপযুক্ত না, গরুটি তখন ভদ্রভাবে তার বিশাল মাথাটি অন্যদিকে সরিয়ে নেবে। গরুটি জানতে চায় না প্ল্যাস্টিক খেলে কী হয়, জানতে চায় না প্ল্যাস্টিক খাওয়া যায় না কেন ইত্যাদি। কিন্তু একজন মানবশিশু, যে সবেমাত্র একটু আধটু বুঝতে শিখছে, সে প্রশ্ন করে। সে তার বাবার হাতের আঙুল ধরে জানতে চায় আকাশ নীল কেন, রাত কেন কালাে, পাহাড় কেন এত উঁচু, পাখি কেন উড়তে পারে ইত্যাদি প্রশ্নবাণে সে জর্জরিত করে তার বাবা-মাকে, তার আশপাশের সবাইকে। এই যে প্রশ্ন করার ক্ষমতা, চিন্তা করার ক্ষমতা, এটা প্রাণিজগতে একমাত্র মানুষেরই আছে। মানুষ অজানাকে জানার জন্য প্রশ্ন করে। সত্য-মিথ্যা নির্ণয়ের জন্য প্রশ্ন করে। সত্য মিথ্যা নির্ণয়ের জন্য প্রশ্ন করে। তার আদিমতম কৌতুহল থেকে জন্ম নেয় প্রশ্নের। সে প্রশ্নগুলাের ডাল চতুর্দিকে বিস্তৃত হয়। জানার কৌতুহলটা যদিও মানুষের আদিম কৌতুহলগুলোর একটি, তবুও সে কতটুকু জানছে আর কী জানছে তা নির্ভর করে সে কোথা থেকে জানছে আর কার কাছ থেকে জানছে। সঠিক প্রশ্ন নিয়ে সে যদি ভুল মানুষের কাছে যায়, তাহলে সে ভুল উত্তর পাবে তা ভুল জানবে। ভুল প্রশ্ন নিয়ে যদি সে সঠিক মানুষের কাছে যায়, তবুও সে সঠিক উত্তর পাবে। কারণ, সঠিক মানুষটা প্রথমে তার প্রশ্ন শুধরে দেবে। এরপর সেই প্রশ্নের উত্তর দেবে। সুতরাং শুধু প্রশ্ন করতে পারাটাই বাহাদুরি নয়, সেই প্রশ্নের উত্তরের জন্য কোথায় আর কার কাছে যাওয়া হচ্ছে সঠিক জ্ঞানার্জনের জন্য সেটাও অন্যতম একটা বিষয়। আরজ আলী মাতুব্বর। জন্মেছেন বরিশাল। যখন থেকে উনার লেখার সাথে পরিচয়, তখন থেকে উনার যে বিশেষ গুণটি আমাকে খুব মুগ্ধ করেছে, তা হলাে উনার প্রশ্ন করার ক্ষমতা। উনি প্রশ্ন করেছেন ধর্ম নিয়ে, ঈশ্বর নিয়ে। প্রশ্ন করেছেন আত্মা, পরকাল নিয়ে। ধর্মের সাথে দর্শন আর বিজ্ঞানের অসামঞ্জস্য নিয়েও বিস্তর আলাপ করেছেন। উনার প্রশ্ন করার এই ক্ষমতাকে আমি সাধুবাদ জানাই। কিন্তু উনি যে বিশেষ অ্যাঙ্গেল থেকে প্রশ্ন করে ধর্মকে, বিশেষ করে ইসলামধর্মকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন, সেই অ্যাঙ্গেলটা আসলে মূল ইসলাম না। আগেই বলেছিলাম, প্রশ্ন করতে পারাটা সাধুবাদের। কিন্তু প্রশ্নের সাের্স যদি ভুল হয়, সঠিক উত্তরের আশা করাটা তখন বােকামিমাত্র। আরজ আলী মাতুব্বর সাহেবের ক্ষেত্রেও ঠিক তা-ই হয়েছে। উনি ভুল ইসলাম দিয়ে মূল ইসলামকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন। উনার জানা “ইসলাম” টা যে আসল ইসলাম নয়, সেটাই এই বইতে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আল্লাহ রাব্বল আলামীনের দরবারে লাখাে-কোটি শুকরিয়া এ জন্যই যে, প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ এর পরে তিনি আমাকে আরও একটি কাজ সমাপ্ত করার তাওফিক দান করেছেন। আলহামদুলিল্লাহ। বইটি লিখতে গিয়ে আমাকে এমন কিছু বিষয়ের মুখখামুখি হতে হয়েছে, যা উম্মাহর মাঝেই ইখতিলাফ তথা মতপার্থক্য আছে। এখন সেই বিষয়গুলাে এড়িয়ে যাওয়াটা কোনােভাবেই সম্ভব নয় বলে আমাকে নির্দিষ্ট একটা অবস্থান থেকে সেই বিষয়গুলাের ওপর আলােচনা করতে হয়েছে। আমার উদ্দেশ্য ছিল আরজ আলী মাতুব্বর সাহেবের সংশয়বাদী প্রশ্ন এবং যুক্তিগুলাের উত্তরপ্রদান, ইখতিলাফকৃত বিষয় নিয়ে উম্মাহর ঐক্য বিনষ্ট করা কখনােই আমার উদ্দেশ্য নয়। সুতরাং বইটি পড়তে গিয়ে কোনাে পাঠক যদি এই বইয়ের কোনাে কিছুকে উনার বিশ্বাস বা আকীদার সাথে আপাতবিরােধী পায়, তাহলে আমার অনুরােধ, তিনি যেন সেটাকে নিতান্তই ইখতিলাফ ভেবে বইয়ের মূল যে উদ্দেশ্য, সে উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে পাঠ করেন। এই বইটিতে ভুলত্রুটি থাকা স্বাভাবিক। বইতে যা কিছু ভুল তা একান্তই আমার পক্ষ থেকে। আর যা কিছু ভালাে তা আল্লাহ সুবাহান ওয়া তাআলার পক্ষ থেকে। রাকুল আ’লামীন আমাদের সিরাতুল মুস্তাকীমের পথে অটল, অবিচল থাকার তাওফিক দান করুন, আ-মীন। 

আরিফ আজাদ শার’ঈ সম্পাদকের কথা 

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। মহান আল্লাহ আমাদের জীন ও মানব দু-ধরনের শয়তান থেকে একান্তভাবে তাঁর কাছে আশ্রয় চাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। শয়তানরা পথভ্রষ্ট করার জন্য দুটি অস্ত্র ব্যবহার করে থাকে। একটি হচ্ছে প্রবৃত্তির বাধাহীন চাহিদাপূরণের প্রতি উৎসাহপ্রদান, আরেকটি হচ্ছে মনের কন্দরে সন্দেহের বীজ বপন করা। আরজ আলী মাতুব্বর সাহেবদের কর্মকাণ্ডে প্রথমটির চেয়ে দ্বিতীয়টিই বেশি দেখা যায়। তারা আল্লাহ, তাঁর রাসূল, আখেরাত, তাকদীর ইত্যাদি নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করে মানুষের ঈমান ও আমল বিনষ্ট করতে সচেষ্ট থাকে। তারা নিজেরা তাদের সন্দেহের ওষুধ গ্রহণ করে তা নিরাময় না করে অপরের দিকে সে সন্দেহ পাচার করে শান্তি পায়। আর এটাই চিরাচরিত নিয়ম যে রােগীরা সাধারণত সুস্থ মানুষকে ঈর্ষা করে। তারা যদি নিজেদের রােগ নিরাময় করতে পারত তবে নিজেরা যেমন শান্তি পেত অনুরূপভাবে অপর লােকদেরও শান্তি দিত। কিন্তু তারা বাঁকা পথটিই বেছে নিয়েছে। তাদের এসব সন্দেহের উত্তরের জন্য সত্যিকারের দীনী জ্ঞান থাকা যেমন জরুরি তেমনি দরকাশ আধুনিক কলা-কৌশল ও বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠিত প্রমাণাদি। দুটির সমন্বয়েই তা হয়ে উঠবে সােনায় সােহাগা। ‘আরজ আলী সমীপে’ গ্রন্থটির শার’ঈ দিকটি আমি দেখেছি।  আমার কাছে মনে হয়েছে তাতে দুটি দিকই যথার্থভাবে স্থান পেয়েছে। যদি কুরআন ও সুন্নাহর সত্যিকারের অনুসরণের মাধ্যমে কোনাে সন্দেহের উত্তর দেওয়া হয় তবে তা হয় যথার্থ। সুতরাং এ বইটির উত্তরসমূহ শার’ঈ ভিত্তির ওপর নির্ভর করে প্রদত্ত হয়েছে। বলে আমি মনে করছি। আমার বিশ্বাস রয়েছে যে, এ গ্রন্থটি বাংলা-ভাষাভাষী সবার হাতে থাকা দরকার; যাতে করে আর কোনাে আরজ আলী আমাদের সন্দেহের ধুম্রজাল সৃষ্টি করে ধোঁকা দিতে না পারে। 

ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া অধ্যাপক, আল-ফিকহ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগ আইন ও শরীআহ অনুষদ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া। 

Post a Comment

0 Comments

Close Menu