Ad Code

Responsive Advertisement

বুক রিভিইউ: নির্বাসন - সাদাত হোসাইন

বইঃ নির্বাসন
লেখকঃ সাদাত হোসাইন
প্রকাশনীঃ অন্যধারা প্রকাশন
প্রকাশকালঃ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
মুদ্রিত মূল্যঃ ৫৯০ টাকা
রিভিইউ লিখেছেন: তাসলিমা ইসলাম
বুক রিভিইউ: নির্বাসন - সাদাত হোসাইন
নির্বাসন

সাদাত হোসাইন এর লেখা পড়া এটা আমার দ্বিতীয় বই। ২০১৮ তে নিঃসঙ্গ নক্ষত্র পড়ে লেখকের লেখার সাথে পরিচিত হই।

সার সংক্ষেপঃ নির্বাসন একটি সামাজিক, রোমান্টিক, আঞ্চলিক, রহস্যে ঘেরা উপন্যাস।
নবীগঞ্জ শহর, গোবিন্দপুর গ্রাম এবং লস্করের চর এই তিনটি স্থানকে ঘিরে বর্ণিত হয়েছে নির্বাসন উপন্যাসটি।
উপন্যাসটিতে অনেকগুলো উল্লেখযোগ্য চরিত্র রয়েছে। নবীগঞ্জের আজহার খন্দকার, এবং তার দুই ছেলে মনসুর ও মঞ্জু, নবীগঞ্জ থানার কর্মকর্তা কর্মচারী মইনুল হাসান, একরামুল ও নুরুন্নবী।
লস্করের চরের তোরাব আলী লস্কর, এবং তার নাতনি জোহরা, এছাড়াও হানিফ, বাহাদুর, আয়নাল হক উল্লেখযোগ্য। অন্যদিকে গোবিন্দপুরের কণা, কণার বাবা দেলোয়ার হোসেন, মা শাহিনা বেগম উল্লেখযোগ্য।
নবীগঞ্জের মনসুর ডাক্তারি পড়া অবস্থায়ই বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে কণাকে দেখে পছন্দ করে অতঃপর ভালোবাসা, বিয়ে। কণার মনসুর যখন তাদের নতুন সংসার সাজানো এবং নিজেদের ক্যারিয়ার নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে দিন কাটাচ্ছে। তখন অপরদিকে লস্কর ডাকাতদের চরের মানুষদের নানা অসুখ-বিসুখ এর কারণে ডাকাত সর্দার তোরাব আলী লস্কর দুশ্চিন্তাগ্রস্ত দিশেহারা। তখনই তার আদরের নাতনি জহুরা আত্মপ্রকাশ করে। সে চরের মানুষদের সুরক্ষা করতে একটার পর একটা দুঃসাহসী পদক্ষেপ নিতে শুরু করে।
ডাকাতির জের ধরে নবীগঞ্জের ব্যবসায়ী খন্দকারের পরিবারের সাথে যোগসূত্র তৈরি হয়। ডাকাতদের মোকাবেলা করতে গিয়ে নেমে আসে খন্দকার পরিবারে ভয়াবহ করুণ পরিণতি। দুঃসহ প্রভাব পড়ে কণার এবং তার বাবারবাড়ির, শ্বশুরবাড়ির মানুষদের জীবন। মনসুরের সাথে যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছিল সেটাই ছিল উপন্যাসের মূল টুইস্ট। এ ঘটনার মধ্য দিয়েই বদলে যায় গল্পের মোড়। পরিবর্তন হয়ে যায় অনেকগুলো জীবনের গল্প।
নিজস্ব মতামতঃ গত তিন মাস ধরে টানা নবীন লেখকদের বই পড়তে পড়তে মোটামুটি একটা ধারনা তৈরি হয়ে গিয়েছিল মনে তাদের লেখা সম্পর্কে। কিন্তু নির্বাসন পড়তে গিয়ে আমি কিছুটা দ্বিধা দ্বন্দ্বে পরে গেছি। প্রথম যখন পড়া শুরু করলাম কয়েক পৃষ্ঠা পড়ে ভাবছি এইতো বেশ, লেখক খুব যত্ন নিয়ে বইটি লিখেছেন। পরক্ষনেই দেখলাম লেখক শেষ পর্যন্ত সে যত্ন ধরে রাখতে পারেননি। কিন্তু এই বিশাল আকারের উপন্যাসটি লেখক আমাকে দিয়ে বেশ আগ্রহের সাথে শেষ করিয়েই ছাড়লেন।
উপন্যাসের প্লট নির্বাচনটি ছিল দারুণ। একটি এলাকার দুঃসাহসী ডাকাতদল এবং তাদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত একটি পরিবারের গল্প। সেই সাথে ফুটে উঠেছে নবীগঞ্জের চরাঞ্চলের মানুষের জীবন যাত্রা।
লেখক চরিত্র এবং তাদের সম্পর্কগুলোকে উপন্যাসে চিত্রায়ন করেছেন চমৎকারভাবে। এই উপন্যাসের রয়েছে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। তোরাব আলী লস্করকে লেখক ডাকাত বংশের দলীয় প্রধান হিসেবে তার চরিত্রের দৃঢ়তা, গাম্ভীর্যতা, দূরদর্শিতা ইত‍্যাদি গুণাবলী দক্ষতার সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন।
জহুরার চরিত্রে লেখক কখোনো মাতৃত্বের মায়া মমতা, কখনো ডাকাতিনীর নৃশংসতা আবার কখনো ভালোবাসার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠা জহুরাকে রহস্যময়ী এক চরিত্রের সৃষ্টি করেছেন। জোহরার তার দাদার সাথে খামখেয়ালি সংলাপ গুলোও বেশ চমৎকার।
কণা আর মনসুরের ভালোবাসার রোম্যান্টিক চিত্রটি খুব সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছে। কণার দুর্বিষহ দিনের বর্ণনাও ছিল পাঠকের হৃদয় ছুঁয়া।
এছাড়াও পার্শ্ব চরিত্রগুলো লেখক যুক্তিযুক্তভাবে চিত্রায়ন করেছেন।
বর্ণনায় শব্দচয়নে বেশ যত্নশীলতার ছাপ পাওয়া যায়। বেশ সহজ সহজ সাবলীল ভাষায় বর্ণনা করেছেন। খুব সুন্দরভাবে নবীগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষার প্রয়োগ করেছেন সংলাপে। এবং নামকরণের যথার্থতা ফুটে উঠেছে উপন্যাসটিতে।
এবার বলছি, একজন নবীণ উদীয়মান লেখকের রচনায় কিছু জড়তার কথা। আমার মনে হয়েছে কিছু জায়গায় বর্ণনায় এবং শব্দচয়নে অপটুতা রয়েছে। যে কথাটি দুই-তিন লাইনে লিখতে পারতেন সেখানে পাঁচ-ছয় লাইনে লিখেছেন।
শব্দচয়নের ক্ষেত্রে একই শব্দের অধিক ব্যবহার যেমন মুগ্ধ, আনন্দ, রাগ, বিরক্ত, খুশি সকল বিশেষণের সাথেই “যারপরনাই” শব্দটি ব্যবহার করেছেন। এই “যারপরনাই” এর অতিরিক্ত ব্যবহারে আমি সত্যি সত্যি যারপরনাই বিরক্ত। ইংরেজি শব্দের বেমানান ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
কিছু অতিরিক্ত বর্ণনায় গল্পের সুর কেটেছে কিছু জায়গায়। কিছু সম্পর্কের বর্ণনা অতিরঞ্জিত ভাব দেখা যায়। যেমন কণার সাথে তার শ্বশুরের সম্পর্ক। লেখক উপন্যাসে বিভিন্ন চরিত্রের মাঝে আলাদা আলাদা ভাবে আঞ্চলিক ভাষা ও মার্জিত শহুরে ভাষা ব্যবহার করেছেন। সেখানে অনেক সময় গুলিয়ে ফেলেছেন।
আশা করি লেখক এই সমস্ত জড়তা কাটিয়ে উঠবেন। লেখক এর জন্য রইল শুভকামনা ও ভালোবাসা।
সবশেষে বলতে চাই, উপন্যাসটি শেষ হয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ অমীমাংসিত প্রশ্ন রেখে। লেখক সেটা পাঠকের উপর ছেড়ে দিয়েছেন। আমি জানি না অন্য পাঠকদের কেমন মনে হয়েছে। যেটা ঘটতে যাচ্ছিল সেটা ভাবতে গেলে আমার নিজেকে পাগল পাগল লাগছে। অন্যদিকে বিপরীতটা ভাবতে গেলে মনে হচ্ছে, লেখক আমাদের আরও একটি চমৎকার উপন্যাস লিখে উপহার দিতে পারেন।

Post a Comment

0 Comments

Close Menu