|
জয়জয়ন্তী - হুমায়ূন আহমেদ |
জয়জয়ন্তী।
-হুমায়ূন আহমেদ
এই পৃথিবীতে অল্পকিছু মানুষ আছে, যাদের গোটা জীবনটা কাটে শুধু দুঃখের গান গাইতে গাইতে। রাত্রি সেই অল্পকিছু মানুষের মধ্যে একজন। তার দুঃখের রঙ বড়ো বিচিত্র। স্বামী নামের বস্তুটার সাথে ছাড়াছাড়ির পর থেকে সে উঠেছে বাপের বাড়ি। এখানেও ঠুনকো দুঃখের চাল মেঘে তার সমস্ত আকাশটা অন্ধকার হয়ে আছে! রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হয়ত রাত্রির কথা ভেবেই লিখেছেন "কেন মেঘ আসে,হৃদয় আকাশে,তোমারে দেখিতে দেয় না!" রাত্রিদের জীবনে কেন এতো দুঃখের মেঘ? কেমন সেই দুঃখের ধরন? কেন শ্রাবণের একটা ঝোড়ো হাওয়া এইসব দুঃখ কষ্টকে দূর দিগন্তে নির্বাসনে দিয়ে আসেনা? আরেকটা কথা, বিয়ের দুই বছরের মাথায় তাদের ছাড়াছাড়ি হলো কেন? এর নেপথ্যে কি খুব বড়ো কোন ঘটনা আছে? থাকলে সেই ঘটনাটা কি?
বাবলু রাত্রির একমাত্র ভাই। সম্প্রতি রোজ রাতে মাতাল হয়ে বাড়ি ফেরা তার একরকম অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তার মাতলামির মাত্রা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে! অথচ বাড়িতে তার বৃদ্ধ বাবা, ডিভোর্সি একটা বোন রয়েছে। এদের দায়িত্ব কে নিবে? তার উপর সে ইদানীং নতুন সুর ধরেছে বাড়িটা বিক্রি করে দিবে। তাহলে তার বাবা আর রাত্রি কোথায় যাবে? তিনটা মানুষের মাথাগোঁজার শেষ আশ্রয় এই বাড়িটা শেষতক সে কি বিক্রি করতে পারবে? রাত্রির এখন করনীয় কি?
রাত্রির বাবা আসলে চোখে কিছুই দেখেন না,এই ব্যাপারটা ধরা পড়লো ডাক্তার খানায় গিয়ে। আশ্চর্যজনক ঘটনা, চোখের চিকিৎসার ব্যাপারে তার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। তার একটাই কথা, চোখ দিয়ে সুন্দর যা কিছু তা দেখা শেষ। এখন সংসারের এই বিশ্রী রূপটা তিনি আর দেখতে চান না! রাত্রি বলেছে,চিন্তার কোনো কারণ নেই। সবকিছু আবার আগের মতো ঠিক ঠাক হয়ে যাবে। আসলেই কি কোনকিছু ঠিকঠাক হয়? সুখের হরিণ একবার দড়ি ছিড়ে চলে গেলে তাকে কি আর ফেরানো যায়?
বীনুকে বাবলুর জন্য পছন্দ করেছে রাত্রি। বাবলুর নিজেরও মেয়েটাকে খুব পছন্দ। এই পাত্রীর সন্ধান জোগাড় করেছে পান্না ভাবি। পান্না ভাবি নিজের সংসারটা শেষ করে দিয়েছে! অহেতুক রাত্রিকে নিয়ে যা সে বলেছে,তা একটা মেয়ের পক্ষে হজম করা অসম্ভব! পান্না ভাবিটা কে? তার সাথে রাত্রিদের কি সম্পর্ক? আর কি বলেছে সে রাত্রিকে?
বীনু কাঁদতে কাঁদতে বাবলুদের বাড়ি থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। রাত্রি আর বাবলু হাসপাতালে বসে কাঁদছে। মামুন তার নতুন বিয়ে করা বৌকে নিয়ে গেটে দাঁড়িয়ে আছে। রাত্রির বাবা চোখ বুজে বারান্দায় পড়ে আছে। রাত্রির ছেলেটা আইসিউতে। সবমিলিয়ে গুমোট একটা অবস্থা! এখান থেকে উত্তরণের উপায় কি? জয়জয়ন্তীর কথা শুনানোর মতো কেউ কি আছে?
এমন অনেকগুলো প্রশ্নের উত্তর মিলবে বইটিতে।
বই বৃত্তান্তঃ বইটা ১৯৯৪ সালে "মাওলা ব্রাদার্স" থেকে প্রথম প্রকাশিত হয়। ১০১ পৃষ্ঠার এই বইটার দাম ৬০ টাকা। রেটিংঃ৮/১০
মতামতঃ রাত্রি চরিত্রটার সাথে হুমায়ূন ভক্তরা অনেকটা পরিচিত। তার দৃঢ়চিত্ততা অনেককেই গভীর ভাবে স্পর্শ করে। ভেতরে একটা নাড়া দেয়। বাবলুর শেষটা লেখক তাঁর মতো করে লিখেছেন, ভালোই হয়েছে। তবে শেষে যদি বীনুর সাথে একটা পরিনতি হতো, যদি সে গোটা সংসারের হাল ধরতো, তাহলে হয়তো আমার মতো পাঠক আরও খানিকটা আনন্দ পেতো। এর বাইরে মামুনের কঠিন একটা পরিনতি দেখানো যেতো, প্রাকৃতিক শাস্তি হিসেবে। এছাড়া সব ঠিক আছে।
0 Comments