Ad Code

Responsive Advertisement

বুক রিভিইউ: থ্রি মেন ইন আ বোট - জেরোম কে জেরোম

লিখেছেন: মাশুদুল হক

থ্রি মেন ইন আ বোট বইটা লিখেছেনজেরোম কে জেরোম, ব্রিটিশ লেখক,প্রকাশ-কাল:১৮৮৯ সাল। এই পুরনো আমলের বইটা দিয়ে আমার বই-রিভিউ সিরিজ লেখার একটা নির্দোষ নৈর্ব্যক্তিক কারন আছে। এ বইটা এখন পর্যন্ত অনুবাদ এবং মূল বই মিলিয়ে আমার সবচেয়ে বেশি বার পড়া বই। এবং হ্যা, বেশিবার কেনা বইও! সবমিলিয়ে পাঁচবার এর বাঙলা অনুবাদ কিনেছি, মূল বইটা কেনার জন্য নীলক্ষেত আর শাহবাগে বহুদিন ঘোরাঘুরি করছি। পাই নি, পরে ই-বুক হিসেবে নামিয়েছি বহুবার। যতবার হার্ডডিস্ক ক্রাশ করেছে বা কোনভাবে হাতছাড়া হয়েছে ততবার নতুন করে নামিয়েছি, ই-রিডার কেনার পর প্রথম চান্সেই যে কয়টা বই নিয়েছি তাতেও এটা ছিল।

বইটার বাঙলা অনুবাদ আছে সেবা থেকে,অনুবাদ করেছেন এ.টি.এম. শামসুদ্দীন, অসাধারণ আর দারুন অনুবাদ, যদিও সেবার বইগুলো যে দোষে দুষ্ট সেটা এড়ায়নি, সংক্ষেপ করা। (সেবারজন্য আমার এক ধরনের কষ্ট হয়,তারা আমাদের দেশের সবচেয়ে ভাল অনুবাদকদের নিয়ে বসে আছে, অথচ তারা কৃপনের মত বই সংক্ষেপ করে,সবচেয়ে খারাপ কাগজে ছাপায়, যাচ্ছেতাই প্রচ্ছদ করে- বইয়ের দাম নিয়ে তাদের এত ভাবনা থাকলে অন্তত প্রজাপতি থেকে ভাল-ভাবে ছাপতে পারতো। অন্যকোন কারন আছে কিনা জানিনা, আমার মাথায় অন্তত আসে না)। 
সেবার অনুবাদ ‘ ত্রি রত্নের নৌ-বিহার’

থ্রি মেন ইনআ বোট বইটার  জনরাটা কি সেটা নিয়ে একটা মজা আছে । পল্টন থেকে একবার বইটা কিনি, পুরান বইয়ের দোকান থেকে। আগে বইটা যার কাছে ছিল তিনি বইটা সম্পর্কে একটা ভয়াবহ মন্তব্য করে রেখে গেছেন- প্রথম পৃষ্ঠা উল্টাতেই দেখি গোটা গোটা হরফে লেখা-‘বইটা পড়ে যদি আপনি হাসতে হাসতে মারা না যান, তাহলে আপনি বইটা কিছুই বোঝেন নাই।’ তারমানে ধরা যায় এটা একটা স্যাটায়ার, বইয়ের কেতা-দুরস্থ রিভিউ গুলোতেও এটাকে স্যাটায়ার হিসেবে উল্লেখ করা। তবে এটা অনেকেই মানেন না। তাদের মতে এটা একটা ভ্রমণ কাহিনী। টেমস নদীতে তিনজন উদভ্রান্ত বিহ্বল যুবকের স্মৃতিকাতরতাময় ভ্রমণ কাহিনী। অনেকের কাছে বিরক্তিকর এমনকি। ব্যাপারটা বেশ অদ্ভূত, একই বই কেউ হয়তো হাসতে হাসতে মারা যাচ্ছে আবার কেউ টানতেই পারছে না। এমনকি ব্যাপারটা বাঙালি পাঠকদের জন্যই শুধু সত্য তা না, গুটেনবার্গপ্রজেক্টে এ বই নিয়ে যে আলোচনা আছে সেটা পড়ে বুঝলাম, এটা বিশ্বব্যাপী ঝামেলা। কিছু মানুষের কাছে এটা স্রেফ একটা ভ্রমণ কাহিনী,যেখানে মূল ঘটনার বাইরে মাঝে মাঝে কিছু মজার ঘটনার বর্ণনা আছে, আছে কিছু দার্শনিক কচকচানি। কিন্তু যারা আসলেই এ বইটা পড়ে মজা পান তাদের কাছে কখনোই এটাকে অন্তত ভ্রমণকাহিনী মনে হবে না। গুটেনবার্গের কিছু কমেন্ট দেখলেই ব্যাপারটা বোঝা যায়-
“veryfunny in parts and dull in others. i was tempted to put it down but get goingand kept being rewarded by laughs. only for it to get dull again”- 2012.04.05,tommarball

“I have read this book more times than I care to remember. Each time I laugh until it hurts and gasp at the descriptive writingin between the humour.”- 2011.12.17 Paul Hatton

দুই টাইপ কমেন্ট। ব্যাপারটা আমি মেনে নিতে পারছিলাম না। 
আমি মেডিকেলে একটি পাঠচক্রের সাথে জড়িত, সন্ধানী সিওমেক ইউনিটের সে পাঠচক্রের কয়েকজন জুনিয়রকে আমি বইটা পড়তে দেই,পড়তে দেই কিছু বন্ধুদেরও। রীতিমত গবেষণা করার মত হিসেব করি যারা বইটা পড়ে মজা পাচ্ছে, আর যারা পাচ্ছে না তাদের মধ্যে পার্থক্য কি! দু:খজনক ব্যাপার হল বিষয়টা তারপরও আমার কাছে পরিষ্কার হয় নি। একটা উদ্ভট সিদ্ধান্তে অবশ্য আসতে পেরেছি, সেটা যেসব বাঙালিপাঠক শিবরাম চক্রবর্তীর  বই পড়ে মজা পাবে,তারা এ বইটাও পড়ে হাসতে হাসতে মারা যাবে। এটাকে মানদন্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা যায়কিনা জানি না, কেনই বা করা যায় সেটাও জানি না,তবে এটা সত্য। নতুন করে যারা পড়তে যাবেন, তাদের ক্ষেত্রে তাই আমি বলতে পারবো না আপনাদের কেমন লাগবে, কারন অনেকেরই হয়তো শিবরাম পড়া থাকবে না, তবে এটা পড়ে ভাল লাগলে শিবরামও ভাল লাগবে-এটাই হয়তো বলা যায়।

এক কথায় বইটা না পড়ে থাকলে বোঝানো যাবে না কেমন, একটা রম্যগল্প কখনো কখনো এমন সিরিয়াস দার্শনিক হয়ে যায় কিভাবে সেটা বোঝা দুর্বোধ্য। দারুন হালকা কথাবার্তার মাঝখানে হঠাৎ করে এসে যায় অসাধারণ সব সত্য। যেমন নৌকায় কি পরিমান জিনিস নিতে হবে এই চিন্তা করতে গিয়ে লেখক হঠাৎ আনমনা হয়ে ভাবেন-

Let your boat of life be light, packed with only what you need—a homely home and simple pleasures, one or two friends, worth the name,someone to love and someone to love you, a cat, a dog, and a pipe or two,enough to eat and enough to wear, and a little more than enough to drink; for thirst is a dangerous thing.
You will find the boat easier to pull then, and it will not be so liable to upset, and it will not matter so much if it does upset;good, plain merchandise will stand water.  You will have time to think as well as to work.  Time to drink in life’s sunshine—time to listen to the Æolian music that the wind of God draws from the human heart-strings around us...

তবে বইটা পৃথিবীর মানুষ কীরকম গ্রহণ করেছে সেটা বিস্ময়কর। প্রকাশের পর থেকে এখন পর্যন্ত বইটা প্রেসকে একদিনের জন্য নিষ্কৃতি দেয় নি। এর প্রকাশক বিরক্ত হয়ে বলেছিলেন-
“আমার মাঝে মধ্যেই মনে হয় লোকজন এ বইটা নিশ্চয়ই পড়ে না, নিয়ে উদরপূর্তি করে”
প্রথম দশকে এ বইয়ের দু’লক্ষকপি বিক্রি হয়, এক হিসাব মতে পাইরেটেড কপি হয়ে একই সময়ে প্রায় আরো দশ লক্ষ কপি বিক্রি হয়। আর সেই ধারা আজ অবধি থামে নি, এখনো প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় বইটা বিক্রি হয়, আর ই-বুক হিসেবে কত কত কপি রোজ ডাউনলোড হচ্ছে তার হিসাব তো নেইই।

তাই যদি আপনি উপভোগকারী পাঠকদের মধ্যে সৌভাগ্যক্রমে পড়ে যান, তাহলে আমি নি:সন্দেহে বলতে পারি, বইটা আপনার একটা দিন কেড়ে নেবে, আপনার চোয়াল ব্যথা হয়ে যাবে হাসতে হাসতে, এমনকি শ্বাসকষ্টও হতে পারে, তারইমাঝে মধ্যে আপনি থমকে যাবেন এর দারুন সব দর্শনে, আপনি ভালবাসবেন এর তীর্যক সব সত্যকে।
প্রিয় পাঠক, এখনো এটা না পড়েথাকলে আমি জানি বইটা শেষ করে আপনি আবার আমাকে খুঁজে বের করবেন, কারন সুপাঠকরা কৃতজ্ঞও হয়।
হ্যাপি রিডিং!!

Post a Comment

0 Comments

Close Menu