Ad Code

Responsive Advertisement

বুক রিভিউ: বই: মেঘ বৃষ্টি আলো

বই: মেঘ বৃষ্টি আলো

লেখক: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

প্রথম প্রকাশ: ১৯৯৪
পৃষ্ঠাসংখ্যা: ১০০
মূল্য: ১১৩ টাকা
রিভিইউ লিখেছেন: সৈয়দা ফাতিমা বানু

ভালোবাসা জিনিসটা কি?

কেবলই কি শরীরের আকর্ষণ? অনুরাধা বিশ্বাস করতে চায় এর বাইরেও অন্য কিছু, কিন্তু যারা তাকে চেয়েছে তারা শরীরের বেশি কিছু চায়নি তার কাছে। তাই শান্তনু আর জয়শ্রীর ভালোবাসাটা নিয়ে অনুরাধা বাজি ধরেছে নিজের সাথেই। তার চোখে শান্তনু-জয়শ্রী পৃথিবীর শেষ প্রেমিক প্রেমিকা।

শান্তনু ছটফটে স্বভাবের যুবক, অর্থনীতিতে এম এ করে এখন এই চাকরি সেই চাকরিতে ভেসে বেড়াচ্ছে। বাবা বিখ্যাত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। বাপের পরিচয় মুছে ফেলার চেষ্টায় শান্তনু সবসময় পরিবার থেকে দূরে দূরে থেকেছে। আলাদা ভাড়া ফ্ল্যাটে থাকে, কিন্তু একটা পারিবারিক স্নেহর জন্য মন ব্যকুল তার। প্রথম যৌবনে কিছুদিন কলেজে পড়িয়েছিল। সেখানেই তার ছাত্রী ছিল জয়শ্রী। 

কলেজে সেভাবে আলাদা করে খেয়াল করা হয়নি। কিন্তু পরিচয় গাঢ় হল সিমলায় আকস্মিক দেখা হয়ে। সেবারই শান্তনুর মনে হল, তার হৃদয়ের যে অংশটায় অপার শূন্যতা, এই চপলা সুন্দরী মেয়েটির মাপ যেন ঠিক সেই শূন্যতার সমান। শান্তনুর সব অস্থিরতা এবার জড়ো হলো জয়শ্রীকে পাওয়ার চাওয়াতে।


জয়শ্রীর পরিবারটা বেশ সনাতনী সংস্কার মেনে চলা। তার বাবা-মা মেয়েকে স্বাধীনতা দিয়েছেন, কিন্তু একেবারে ছেড়ে দিতেও পারেননি। 

তাদের পক্ষে শান্তনুকে মেনে নেওয়া বেশ কঠিনই বলতে হবে। এতো বাধার পড়েও চঞ্চল জয়শ্রীর মধ্যে এক একরোখা সত্ত্বা বাস করে। বিয়ে করলে সে শান্তনুকেই করবে।


কিন্তু এই তিন নর-নারীর কারোর সমীকরণই মিললো না। ভুল হয়ে গেলো কোথাও। ভালোবাসার ভুল সমীকরণের গল্প 'মেঘ বৃষ্টি আলো '।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের এই উপন্যাসটির গল্পটা সংক্ষেপে খুব সরল, তিনজনের ভালোবাসার গতানুগতিক কাহিনী। তাও এটা ঠিক সাধারণ প্রেমের উপন্যাস নয়, প্রেমের অনুভব আর ব্যাখার গভীর পটভূমি আছে গল্পে।


গল্পটা শান্তনু আর জয়শ্রীর ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে হলেও, এর মূল চরিত্র অনুরাধা। তাই তার নিজস্ব জগত স্থান পেয়েছে গল্পে অনেকটা। শান্ত শ্যামলা মেয়েটি, ঝিরিঝিরিয়ে হেসে বেড়ায়, কিন্তু সে প্রতিদিন বাড়ি ফেরে মন খারাপ করে। 

তার পথের কাঁটা হয়ে থাকে চায়ের দোকানে বসা অঞ্জন, বা দোতালার ফ্ল্যাটে প্রনবেশদা-রা। এ নিয়ে প্রতিবাদও করতে পারে না অনুরাধা।

 অঞ্জনের বাবা বা প্রনবেশের স্ত্রী যদি বলেন 'অত মেয়ে থাকতে তোমার সঙ্গেই কেন ও এরকম করে?' তাতে যে অনুরাধারই অসম্মান! নারীজীবনের এই এক কঠিন অসহায়ত্ব।


চরিত্রগুলোকে খুব কম কথায় সুন্দরভাবে বুঝিয়েছেন সুনীল। 'শিক্ষক যদি অব্রাহ্মণ হয়, ব্রাহ্মণ ছাত্র কি তার পায়ে হাত দিতে পারে?' এই এক বাক্যে জয়শ্রীর বাবার মানসিকতাটা বুঝে ফেলা যায়। সুগতর চরিত্রকে লেখক দাঁড়া করিয়েছেন শান্তনুর বিপরীতে। 

তাই শান্তনু যতটা উদ্দাম, সুগত ততটাই পরিপাটি ত্রুটিহীন। শান্তনুর অন্তরের যে ছটফটানি, সেটা জয়শ্রীর দিকে যখন ধাবিত হয়, তখনই বোঝা যায় তার হিসেবে ভুল ছিল। জয়শ্রীকে আদৌ কি ভালোবেসেছে শান্তনু না সে কেবলই তার কাছে নারীত্বের একটি অপরূপ অবয়ব?


এই সাদামাটা উপন্যাসটা আমার ব্যক্তিগত পছন্দ এর দৃশ্যায়নে। সুনীল সরাসরি চোখে আঙুল দিয়ে না বলেও অনেক কিছু ব্যক্ত করেছেন লেখনী দিয়ে। (এই অংশটা স্পয়লার হতে পারে। যদিও এই ধরণের উপন্যাসে ঠিক স্পয়লার হয় কিনা জানি না, তবু কেউ চাইলে এড়িয়ে যেতে পারেন।

 এই বইয়ের গল্পের থেকে এর গল্প বলাটা আমার বেশী পছন্দের, তাই আলোচনা না করে পারছি না।)
শান্তনু জয়শ্রীর বাঁ পায়ের কড়ে আঙুল নিয়ে খেলা করার একটি কথোপকথন ছিল গল্পের প্রথম দিকে। গাড়ি দুর্ঘটনায় আহত হবার পর জয়শ্রী সুগতকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যায়। অনুরাধা বারবার জানতে চায় শান্তনুর কি দোষ ছিল। জয়শ্রী কেবল দেখায়, সেই আঙ্গুলটা, দুর্ঘটনায় থেঁতলে গিয়েছে। আর কিছুই বলেননি লেখক, কিন্তু জয়শ্রীর চরিত্রের গভীরতা পাঠক অনুভব করতে পারবেন এই দুটো দৃশ্য থেকে।


প্রত্যাখ্যাত শান্তনু আবার ফিরে আসে অনুরাধার কাছে। তিনতলায় উঠার সময় সে পেছনে ফেলে আসে অঞ্জনকে, এরপরে প্রণবেশকে - যাদের অনুরাধা ফিরিয়ে দিয়েছে। শান্তনুকেও ফিরিয়ে দিয়েছিল অনুরাধা, তার প্রতিজ্ঞা ছিল জীবনে আসা প্রথম ভালোবাসাকে সে প্রত্যাখান করবে। কিন্তু কতবার? পাথর ফেটেও একসময় জলপ্রপাত বেড়িয়ে আসে।

Post a Comment

0 Comments

Close Menu