Ad Code

Responsive Advertisement

বুক রিভিইউ: ই: দ্য ডিভাইন কমেডি (লা দিভিনা কোম্মেদিয়া)

বই: দ্য ডিভাইন কমেডি (লা দিভিনা কোম্মেদিয়া)
লেখক:দান্তে আলিগিয়েরি
অনুবাদ: সুধাংশু রঞ্জন ঘোষ্
ধরন: মহাকাব্য
the devine comedy

রিভিউ লেখকঃ Sowrav Ahmed
বইটি ডাউনলোড করুন: এখান থেকেপ্রকাশনার তারিখ: ১৩০৪ থেকে ১৩২১ সালের মাঝে
-
ভূমিকা:দ্য ডিভাইন কমেডি (লা দিভিনা কোম্মেদিয়া) মহাকাব্যটি তিন পর্বে বিভক্ত যথা:— ইনফেরনো, পুরগাতোরিও এবং পারাদিসো। প্রতিটি পর্বে রয়েছে ৩৩টি সর্গ বা কান্তি (ইতালিয় ভাষায় কান্তির একক কান্তো)। তবে ইনফারনো পর্বে আছে ৩৪টি সর্গ। অবশ্য এটি মুখবন্ধ স্বরূপ। অর্থাৎ সব মিলিয়ে সর্বমোট ১০০টি কান্তি রয়েছে এ মহাকাব্যে।

এ সাহিত্যকর্মে "তিন"—এর ব্যবহার অভিক্ষিপ্ত। সাথে সাথে, ছন্দ হিসেবেও তেরজা রিমা ব্যবহার করা হয়েছে, যেখানে প্রতিটি লাইনেই রয়েছে ১১টি মাত্রা।
-
কাহিনী সংক্ষেপে
খ্রিস্টান ধর্মের দৃষ্টিকোণ থেকে দান্তের নরক ভ্রমণ ও স্বর্গ গমণের কাহিনী এ মহাকাব্যের মূল উপজীব্য।প্রকৃতপক্ষে এ কবিতায় স্রষ্টার দিকে আত্মার ভ্রমণের কথাই বলা হয়েছে।দান্তে মধ্যযুগের খ্রিস্টান ধর্মচিন্তা ও দর্শন ফুটিয়ে তুলেছেন, বিশেষত থামিস্টিক দর্শন ও থমাস একিনাসের সুম্মা থিওলোজিকা। যার কারণে, "দিভিনা কোম্মেদিয়া"-কে "ছন্দে ছন্দে সুম্মা"(The Summa in verse)ডাকা হয়। দান্তের এ সাহিত্যকর্মে ভের্গিলকে মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে, কারণ বিয়েত্রিচকে দেখানো হয়েছে ঐশ্বরিক জ্ঞান হিসেবে।
দান্তে হলেন পৃথিবীর একমাত্র কবি যিনি মৃত্যুর মাঝে অমৃত্যুর গান গেয়েছেন,দুখ্যের সীমাহীন অন্ধকারে অক্ষয় আশা আর ধর্ম বিশ্বাসের অনির্বাণ দীপশিখা জ্বালিয়ে আপন লক্ষে এগিয়ে গেছে আজীবন। এক অবাঞ্চিত মৃত্যুকে কেন্দ্র করে আবর্তিত বিচ্যা ব্যাথাতুর করে ভাবনার আকাশে ছাপ ফেলে রচনা করেছে এই ডিভাইন কমেডি।
জীবন চলার বাস্তবতার মাঝপথে এসে ঘুমিয়ে পড়ি আমি।
সহসা জেগে উঠে এক অন্ধকার সুগভীর অরণ্য প্রদেশে পথের নিশানায় হারিয়ে গেছি।
এভাবে ১ম খণ্ডের শুরু-
সেই সুগভীর অরণ্য প্রদেশে কবির সাথে ভার্জিলের দেখা হয়,ভার্জিল তাকে বলেন যে তিনি স্বর্গ গত বিয়াত্রিস এর আত্মার আদেশে দান্তেকে পথ দেখিয়ে সমগ্র নরক প্রদেশ ও পরিশুদ্ধির পর্বতের মধ্য দিয়ে স্বর্গের প্রান্তে বিয়াত্রিসের কাছে নিয়ে যাবেন। 
এরপর পরিশুদ্ধি পর্বতে উঠে এসে তার দুটি ধাপ ও সাতটি চত্বর অতিক্রম করতে করতে দেখলেন আত্মারা আপন পাপ কর্মের কারণে নরক যন্ত্রনা ভোগ করছে। এরপর স্বর্গ প্রান্তে এসে বিয়াত্রিসের উজ্জল আলক্মুর্তি দান্তেকে ধীরে ধীরে দশটি গ্রহস্তরে বিভগত নয়টি স্বর্গ প্রান্তে নিয়ে যায়। দশম স্তরে যাবার আগেই সে মূর্তিটি দান্তের আগেই উর্ধে উঠে গিয়ে জগ্নমতা মেরীর সিংহাসনের পদপ্রান্তে অধিষ্ঠিত হয়।
-
এই মহাকাব্য প্রতীকী অর্থে লেখা। ঐতিহাসিকেরা এই প্রতীক কে দুই ভাগে ভাগ করেছেন
১|প্রথাগত প্রতীক
২|স্বভাবগত প্রতীক
এই মহাকাব্যের প্রতিটা চরিত্রই প্রতীকধর্মী,এই রসাত্মক ও রুপাত্ম্যক হলেও বোঝার ক্ষেত্রে অনেক জটিল।
প্রতিটা চরিত্র বাস্তব ধর্মী কিন্তু প্রতিকাত্মক অর্থে মণ্ডিত। ধরা যাক দান্তের কথা। তিনি লেখক কিন্তু মহাকাব্যে প্রধান চরিত্র। মহাকাব্যে-- তিনি মহা দার্শনিক এবং বিয়াত্রিসের প্রেমিক। প্রতীক অর্থে তিনি-- খ্রিষ্টিয় এক পাপাত্মার প্রতীক যারা অন্ধকার অরণ্য প্রদেশ হতে তীর্থ যাত্রা করে ঈশ্বরের স্বর্গরাজ্যে একদিন উপনীত হয়।
ইনিড কাব্যের রচয়িতা ভার্জিল আরেক মূল চরিত্র যে দান্তেকে পরিশুদ্ধির পর্বতে বিয়াত্রিসের কাসে নিয়ে যায়। প্রতীক অর্থে ভার্জিল হল-- মানুষের ,বুদ্ধি,কল্পনা,অনুভু­তি,নীতিশাস্ত্র বিশারদ এমন এক মানুষ যে এসব অর্জনে সক্ষম তথাপি সা স্বর্গ রাজ্যে পৌছাতে পারেনি ক্যারন তিনি অকুণ্ঠ আত্ম্য সমর্পণের ধারা ঈশ্বরের পরম মহিমাকে প্রতক্ষ করতে পারেন নি।
ফ্লোরেন্সের রাজকন্যা বিয়াত্রিস। যার প্রেমে পড়েন দান্তে। প্রতীক অর্থে বিয়াত্রিস হলেন-- সেই চার্চ বা ধর্ম প্রতিষ্ঠান যা মানুষ আর ঈশ্বরকে মাঝে এক সূক্ষ্ম সেতু বন্ধনে আবদ্ধ করে।
এবার তিন খণ্ড নিয়ে কথা বলা যাক।
১ম যে ইনফেরনো (ইনফর্ন) খণ্ড আছে তা প্রতীকী অর্থে-- পাপীদের মনের এজ অবস্থা। গল্পের মাধ্যমে যা এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যে না পড়লে বুঝতে পারবেন না।আর অনেক বড় মিস করবেন।
পুরগাতোরিও (গরিয়ো) হল ২য় খণ্ড,প্রতীকী অর্থে-- পরিশুদ্ধির ধাপ। পাপ কাজ করার পর মানুষ এক অনুশোচনায় ভোগে একসময় সে তা থেকে পরিত্রাণ পেতে পথ খুজে।
পারাদিসো (প্যারিডুসা) ৩য় খণ্ড,প্রতীক অর্থে তা হল স্বর্গ কিন্তু গল্পে তার আরেকটি অর্থ-- মানুষ যখন কামনা বাসনা ও ইচ্ছা অতিক্রম করে জীবনে শান্তি ভোগ করে তখন সেই আত্মিক প্রশান্তির স্তব্ধতার মাঝে অতৃপ্ত কামনা
সরিয়ে অতীন্দ্রিয় পরম তৃপ্তির রসসাগরে ডুবে যায়।
-
উত্তমপুরুষে লেখা এ কাব্যে দেখা যায় তিনটি ভিন্ন জগতে দান্তের ভ্রমণ। রোমান কবি ভের্গিলকে দেখা যায় তার নরক ও পুরিগাতোরিও ভ্রমণে নির্দেশক হিসেবে থাকতে; বিয়েত্রিচ, দান্তের প্রেমিকা, তাকে স্বর্গে নিয়ে যায়। বিয়েত্রিচ ছিলো ফ্লোরেন্স শহরের এক রমণী, যার সাথে দান্তোর শৈশবে দেখা হয়। সারাজীবনই দান্তে তার প্রেমে মগ্ন ছিলেন, যার কথা আসে তার লা ভিতা নুওভাতে আসে।
গ্রন্থটি আসলে জীবনের এক রুপ রেখা থেকে নেয়া,প্রতীক অর্থ বাদ দিলেও এই মহা কাব্যে পরম মঙ্গলময় ও প্রেমময় যে ঈশ্বরের প্রেম বিশ্বের কিছু আলো ও গতি দান করেছে,সব কিছু পরিচালিত করেছে,সেই পরম প্রেমের আস্বাদনের মাঝেই ঘটতে পারে মানুষের সকল চাওয়া পাওয়ার অবসান।
-
মহাকাব্যটি বুঝতে একটু কঠিন হলেও যদি একবার বুঝতে পারেন তাহলে আর শেষ না করে ছাড়তে পারবেন না।একদম বুদ হয়ে থাকবেন পুরোটা সময়।
তাই না পড়ে থাকলে পড়ে ফেলুন।
[আর এতো কঠিন একটা মহাকাব্য নিয়ে রিভিউ লেখা সত্যি একটা দুঃসাহসের কাজ আর সেটা আমি করে ফেললাম।ভুল-ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।]
হ্যাপি রিডিং
পৃথিবী হোক বইময় 

Post a Comment

0 Comments

Close Menu