লিখেছেন:
সজল আহমেদ
বইয়ের নামঃ আহমদ ছফার চোখে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী
লেখকঃ ড. মোহাম্মদ আমীন
পৃষ্ঠাঃ ৯৪
মূল্যঃ ১৫৮ টাকা
প্রকাশনাঃকালিকলম প্রকাশনা
বুক রিভিইউ পূর্বে লেখার কোন অভিজ্ঞতা এই রিভিইউর আগে আমার আছিলো না। এইটাই প্রথম। এবং এটা ঠিক বুক রিভিইউ হলো কিনা জানি না, তবে বইটি সম্বন্ধে ছোট কইরা কিছু বল্লাম আরকি।
আহমেদ ছফা কে? কি তাঁর পরিচয়?
আহমেদ ছফার পরিচয় বই পড়ুয়াগো কাছে দেয়ার দরকার বোধ করতেছিনা। বই পড়ুয়া মানেই আহমেদ ছফাকে চেনার কথা। “আহমদ ছফার চোখে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী” গ্রন্থের লেখক খুব কম সময়ই আহমদ ছফার সান্নিধ্য পাইছেন। তবে এই অল্প সময়েই তিনি তাঁর শ্রেষ্ঠ দিনগুলো বইলা অভিহিত করছেন। তিনি বলছেন,আহমদ ছফা হইলো সেই ব্যক্তি যার ভেতরটা ছিলো ট্রান্সপারেন্ট, তাকাইলে ভেতরে যা আছে বাইরে থেকে যেন বোঝা যাইতো।
১৯৭১ সালের পর বাংলাদেশে একটা সভা হইছিলো ঐ সভায় পশ্চিমবঙ্গের সব লেখকদের আমন্ত্রণ জানানো হইছিলো। আহমদ ছফা তখন ছাত্র। সভা শেষে সভাপতি বাংলাদেশের একজন কে ডাকছিলেন কিছু বলার জন্য,কিন্তু কারো সাহসে কুলোয়নি। একমাত্র ছিপছিপে গড়নের এক যুবক উইঠা দাঁড়ালেন। কিন্তু সমস্যা বাঁধলো যে,সভাপতি এই যুবকরে বক্তব্য দিতে দিবে না! কিন্তু এই যুবক ও ছাত্রদের কাছে হেরে গেলো সভাপতি।ঐ যুবকই সেইদিন বাংলা সাহিত্যকে আনন্দ বাজারের হাত থিকা রক্ষা করেন। সামনা সামনি অপমান করলেন পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্যিকদের! যুবকটি প্রশ্নের পর প্রশ্ন করতে থাকলেন তাদের। যুবকের কোন প্রশ্নের জবাব সেদিন দিতে পারেনি পশ্চিমবঙ্গের বাজারি লেখকরা। কারণ সেই যুবকটি হচ্ছেন আহমদ ছফা। যাকে জীবদ্দশায় কেউ তর্কে হারাইতে পারেননি। পূর্ব থেইকাই তিনি আনন্দ বাজারিদের বিরোধীতা করেছেন।
বইটা শুরু হয় কবি শামসুর রহমানের সুবিধাবাদীতা নিয়া আহমদ ছফার কঠোর মন্তব্য দিয়া! আহমেদ ছফা মনে করতেন শামসুর রহমানকে সরাসরি সরকারের পোষা। এবং একই সাথে, ৭১ এ শামসুর রহমানের অবস্থান নিয়া চমকপ্রদ মন্তব্য করেন। আহমেদ ছফার অনেক সাক্ষাৎকারে কবির পাকিস্তান সরকার লেহনের ব্যাপারটা উঠে আসছে।বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবিদের তিনি বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকারক বলে ইঙ্গিত দিছেন। আহমদ ছফা সবচেয়ে বেশি যাকে বকঝকা(সমালোচনা বলা চলে না, বইটা পড়লেই বুঝবেন কেন সমালোচনা আমি বলিনাই। হুমায়ুনের লেখক স্বত্বা তৈয়ারই করছেন আহমদ ছফা।কিন্তু হুমায়ুন পরে আর তা ধইরা রাখতে পারেনাই। হুমায়ুন কেন,অসংখ্য লেখক গড়ছেন তিনি। যেইখানে প্রতিভা দেখছেন,বিকাশের সুযোগ করায়ে দিছেন) করেছেন তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন হুমায়ুন আহমেদ। আহমদ ছফা কখনোই হুমায়ুনের একটি লেখা বাদে অার কোন লেখাকে সাহিত্যে বলে স্বীকার করেননাই। তাকে লোভী বলেই মনে করতেন ছফা। হুমায়ুনের লেখা নিয়ে আহমদ ছফা বলেন “হুমায়ুনের লেখা হচ্ছে সিগারেট এর মত,আমি জানি ক্ষতি হবে তারপর ও খাচ্ছি”। হুমায়ুন পাঠকদের তিনি তৃতীয় শ্রেণীর পাঠক বলে অভিহিত করেছেন। হুমায়ুন আহমেদ একবার আহমদ ছফাকে বাংলা অ্যাকাডেমির পুষ্কার পাইয়ে দিতে চেয়েছিলো, যা আহমদ ছফার কাছে প্রচণ্ড অপমানকর ঠেকলো! তিনি রাগে অপমানে ফোপাতে ফোপাতে হুমায়ুন কে ফোন দিলো। হুমায়ুন আহমেদ ভয়ে ছফার কাছে আসতেন না, ছফা ডেকেছেন তাই যেতেই হলো। হুমায়ুন আসতে সে কি হাসিখুশি! কিন্তু পরক্ষণেই তেতে উঠে সে কি বকাঝকা! হুমায়ুন মাথানিচু করে সে বকাঝকা হজম করে চলে আসে। সেদিন হুমায়ুন কে হাতজোড় করে ক্ষমা চাইতে হয়েছিলো ছফার কাছে।
আহমদ ছফা যেমন হুমায়ুন কে বকাঝকা করেছেন,তেমনি আবার ভালোও বেসেছেন। একবার হুমায়ুন পরিবার কে বাসা থেকে বের করে দিলো সরকারের হুকুমে। হুমায়ুনের পাশে কেউ এলো না! একমাত্র আহমদ ছফা সেখানে ছুটে গেলেন পেট্রোল নিয়া। শহীদ পরিবারের এই অপমান তিনি মাইনা নিতে পারলেন না। তিনি ঠিক করেছেন,হয় হুমায়ুন কে আগের বাড়ি ফেরৎ দিতে হবে,নতুবা এই পেট্রোল দিয়ে নিজেকে সে জ্বালাইয়া দেবেন। শেষ পর্যন্ত ছফাই জয়ী হইলো। হুমায়ুন পরিবারকে আবার বাসস্থান ফিরিয়ে দিলো মুজিব সরকার। এইরকম অসংখ্য মানুষের বিপদে ঝাপায়ে পরছেন ছফা।টাকা পয়সার দিক দিয়া ছফা গরীব থাকলেও মনের দিক দিয়া ছিলো আকাশের মত বিশাল। চাইলে আহমদ ছফা বাংলা সাহিত্য দিয়া বস্তায় বস্তায় টাকা কামাইতে পারতেন,কিন্তু তা তার সততার পরিপন্থী ছিলো। টাকাটারে ছফা কখনো বড় কইরা দেখেন নাই।দেখা গেছে নিজের পকেটে টাকা নাই,অন্যর কাছ থিকা ধার আইনা তারপর মানুষর হেল্প করছেন।
আহমেদ ছফা কি কাঁদছিলেন কখনো?
হ্যাঁ এত শক্ত মনের মানুষ আহমদ ছফা ও কাঁদতে জানতেন! এই পুস্তকের লেখক স্বীকার করেছেন। মৃত্যুর পাঁচদিন পূর্বে ছফা বেশ অসুস্থ, তাকে দেখতে গেলেন ডাঃ আমীন।ডাঃ আমীন তাঁকে হুমায়ুন দেখতে এসেছিলো কিনা জিজ্ঞাস করতেই,শিশুর মত কেঁদে দেন আহমদ ছফা! বইটির এই স্থানে আমার চোখ ও ছলছল করে উঠছে।ব্যক্তিগত ভাবে আমি একজন শক্ত মনের মানুষ। কিন্তু ঐ পৃষ্ঠা আমার চোখেও পানি আনতে বাধ্য করেছে। আহমদ ছফা চারজনকে শ্রেষ্ঠ বাঙালী হিসাবে মানতেন যার মধ্যে শেখ মুজিব আছিলেন অন্যতম। এই বইটায় আরো কিছু বুদ্ধিজীবিগো বিষয়ে মন্তব্য করা হইছে যা আপনের চিন্তার জগতে সাড়া দিবে। আমাগো বুদ্ধুজীবিগো গলদ কই কই আছে তা ছফা নির্ণয় করছেন। বইটায় আপনে আহমদ ছফার বিশালতা আর আমাগো বুদ্ধিজীবিগো সংকীর্ণতা জানতে পারবেন।আর বাড়াইলে বই পড়ার ইন্টারেস্ট হারায়ে যাইতে পারে।ধন্যবাদ।
বইটা কিনতেঃ
https://www.rokomari.com/book/126723/আহমদ-ছফার-চোখে-বাংলাদেশের-বুদ্ধিজীবী
0 Comments