বই : অ্যাঞ্জেল অব দ্য ডার্ক আউট লাইনঃ সিডনি শেলডন কাহিনি বিন্যাসঃ টিলি ব্যাগশ অনুবাদঃ অনীশ দাস অপু
ডাউনলোড: Click here ===================== Review
সিডনি শেলডনের নামে তাঁরই ভক্ত টিলি ব্যাগশ চারটি বই লিখেছেন যার প্রত্যেকটি ইন্টারন্যাশনাল বেস্ট সেলারের মর্যাদা পেয়েছে । বইগুলোর আউটলাইন সিডনি শেলডনের আর কাহিনি বিন্যাস টিলি ব্যাগশ’র । এই চারটি বইয়ের একটি “অ্যাঞ্জেল অব দ্য ডার্ক” ।
অপরূপা মায়ের বিশ্বাসহন্তার ছাপ যাতে মেয়ে না পায় তাই রাজবংশীয় কন্যা মরিয়মকে পাঠিয়ে দেয়া হয় চাচা সুলায়মানের প্রাসাদে, মরক্কোর মারাকেশ-এ। তখন তার বয়স ১০ বছর এবং সময়টা ১৮৯২ সাল। সেখানে সে বড় হয়ে ওঠে অদ্ভুত এক স্বর্গীয় সৌন্দর্যের আধার হিসেবে। সে প্রাসাদে তার খেলার সাথী ছিল তের বছরের জিবরাইল, প্রধান গোমস্তার পুত্র। ঘটন-অঘটনের ভেতর দিয়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে তাদের। কিন্তু রাজবংশীয় রক্তের সাথে গোমস্তার রক্ত মিলানো যায় না। তাই জিবরাইলের প্রেম পরাজিত হয়। আর মরিয়মের উপযুক্ত বয়সে মরিয়মকে বিয়ে দেয়া হয় বাপের বয়সী ধনাঢ্য শেখ মাহমুদ বাস্তার সাথে। প্রত্যাখাত জিবরাইল মদের নেশায় ডুবে যায়। এদিকে মরিয়ম তখন মাহমুদ বাস্তার সংসারে চার ছেলে এবং লায়লা নামে এক মেয়ের জননী। বয়সের কারণে মাহমুদের মৃত্যু হলে জিবরাইলের প্রেম আবার কড়া নাড়ে মরিয়মের দুয়ারে। কিন্তু মরিয়মের মন থেকে ততদিনে নতুনভাবে শুরু করার স্বপ্ন শেষ। ভগ্নহৃদয় জিবরাইল আত্মহত্যা করে।
সাল ১৯৮৩ । প্রায় শত বছর আগের মরিয়মের কাহিনি লেখা এ বইটি যতবার পড়ে, ততবারই চোখ ভিজে ওঠে নিউইয়র্কের এক অনাথ আশ্রমের অপরূপ সুন্দরী বালিকা সোফিয়ার। কোথায় যেন এ বইটির সাথে সে একটা নাড়ির টান অনুভব করে। আর এ বইয়ের খবর তাকে দিয়েছে এই আশ্রমেরই আরেক বালক, সোফিয়ার প্রতি যার টান একজন অভিভাবকের মতই ।
১৯৯৬ সাল। লস এঞ্জেলস। নৃশংসভাবে খুন হয়ে গেল মাল্টি-মিলিওনিয়ার বৃদ্ধ এন্ড্রু জেকস। আর তার লাশের পাশেই নির্মমভাবে ধর্ষণের শিকার হয়েছে তার থেকে পঞ্চাশ বছরের ছোট অনিন্দ্যসুন্দরী তরুণী স্ত্রী অ্যাঞ্জেলা জেকস। এরকম খুন-ধর্ষন আমেরিকার নিত্যখবর। সুতরাং, এটি তেমন প্রচারে আসার মত কিছু না। তবে সবার নজর কাড়ল তখনই, যখন নিহত স্বামীর সকল সম্পদের সদ্য-মালিক অ্যাঞ্জেলা সকল সম্পদ, যা চারশ’ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি, একটা শিশুদের চ্যারিটিতে দান করে দিয়ে উধাও হয়ে গেল। একই সাথে উধাও হল অ্যাঞ্জেলার লেডি-কিলার উকিল রেনাল্টো।
একগাদা প্রশ্ন বুক থেকে গিয়ে যেন গলাতেই আটকে গেল – অ্যাঞ্জেলার ঐ হত্যাকান্ডে হাত ছিল কিনা , কিংবা সকল সম্পদ অকাতরে বিলিয়ে দিয়ে সে গেলই বা কোথায়, তাঁর উকিল রেনাল্টোই বা কোথায় ! মাঝখানে শুধু রয়ে গেল তদন্তকারী অফিসার ডেনির বুকে এক নিদারুণ হতাশা, যে কিনা মেয়েটির প্রেমে পড়ে গিয়েছিল আর তার মনের গভীরে শুধু একটাই অনুভূতি – কেসটার সুরাহা যাই হোক, মেয়েটি যেন নিরপরাধ প্রমাণ হয় ।
ওপেন এন্ড শাট কেসটির এক দশক পর পৃথিবীর ভিন্ন ভিন্ন তিনটি দেশে ঘটল আরও তিনটি নৃশংস হত্যাকান্ড। ২০০১ সালে লন্ডনে স্যার পিয়ার্স হেনলি, ২০০৫-এ ফ্রান্সে দিদিয়ের আনজু, ২০০৬-এ হংকং-এ মাইলস বেরিং। সবগুলোতেই ভিক্টিম মাল্টি-মিলিওনিয়ার বৃদ্ধ। একই ভাবে খুন হবার সময় সাথে ছিল যার যার অত্যন্ত রূপসী তরুণী স্ত্রী। এসব ক্ষেত্রেও সকল স্ত্রী হয়েছে নির্মমভাবে ধর্ষণের শিকার এবং একমাত্র উত্তরাধিকারী হওয়া সত্বেও স্ত্রীরা তাদের স্বামীর সকল অর্থ শিশুদের চ্যারিটিতে দান করে দেয়। একেবারে ১৯৯৬ সালেরটার কার্বন কপি। এবার নড়েচড়ে বসল ইন্টারপোল, বিশেষ করে প্রেমাহত অফিসার ডেনি যে এখনও ভুলতে পারেনি অ্যাঞ্জেলাকে। জানা গেল – আজরাইল নামে কেউ একজন খুনগুলো ঘটাচ্ছে। কিন্তু কে এই আজরাইল, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে কেন এই খুন, কেনই বা খুনের পাশাপাশি ধর্ষন করছে ,আর কেনই বা ধর্ষিতারা সকল সম্পদ বিভিন্ন শিশু চ্যারিটিতে দান করে দিচ্ছে – সবই ধোঁয়াশা !
এই তদন্তের সময় ডেনির সাথে আলাপ হয় প্রথম ভিক্টিম এন্ড্রু জেকসের বঞ্চিত সন্তান ম্যাট ডেলির। সেও ব্যক্তিগত উদ্যোগে শুরু করেছে খোঁজখবর এবং ডেনির নিষেধ সত্বেও ম্যাট পরিচিত হয় আরেক ভিক্টিম মাইলস বেরিং-এর স্ত্রী লিসার সাথে। এক পর্যায়ে ম্যাট প্রেমে পরে যায় লিসার, এবং লিসাও। ওদিকে হংকং পুলিশের তদন্তে জড়িয়ে পড়ল ম্যাট । আর ম্যাটের মনপ্রান চাইছে লিসার সাথে চিরদিনের মত গাঁটছড়া বাঁধতে। লিসার অতীত বা নিজের তদন্ত কোনকিছুই সে আর ডেনির সাথে ভাগ করে রাজী নয় !
এভাবে বিভিন্ন ঘটনা এবং মোচড়ের ভেতরের দিয়ে, অনেকটা কালক্ষেপণের পর জানা গেল আজরাইলের হাত এবার ভারতে। খবর পাওয়া গেল আজরাইল এবার খুন করবে ভারতের এক মাল্টি-মিলিওনিয়ারকে। তবে, এ ভদ্রলোক তুলনামূলকভাবে আগের শিকারগুলোর চেয়ে কমবয়সী। জাল ফেলল একসাথে ডেনি, ইন্টারপোল এবং ইন্ডিয়ান আই,বি। একটিমাত্র পথ বাকি থাকল যেখান দিয়ে ছাড়া খুনির আর শিকারের ঘরে ঢুকার কোন রাস্তা নেই। এতদিনের অপেক্ষার ফল মিলল এবার হাতানাতে।
কিন্তু একি ? যে রবাহুতটি ছদ্মবেশে ঢুকল খুনের স্থানে সে আর কেউ না - ম্যাট ! যে কিনা শুরু থেকেই ডেনির সাথে ছিল রহস্যভেদের জন্য ! সবাই জানে সে খুনির সন্ধানে ব্যস্ত। কিন্তু ম্যাট যদি খুনি হয়, তাহলে তার বাবা এন্ড্রু জেকসকে কে খুন করল ? আবার সেই যদি খুনির সহযোগী হয়ে থাকে, তাহলে সকল সম্পদ অ্যাঞ্জেলার হাতে যেতে দিল কেন ? ওদিকে, বারবার কি যেন একটা ঘুরেফিরে আসছে সেই ১৮৯২ সালের সাথে সম্পর্কিত হয়ে ! ম্যাটের সাথে তার কি সম্পর্ক ? তাহলে, আজরাইল কি একজন মহিলা ? কিন্তু মহিলা হলে ধর্ষন করছে কে ? ফরেনসিক ল্যাবে পাওয়া ধর্ষনের আলামতগুলোও সকল ক্ষেত্রে ধর্ষনকারী একজনই কিনা তাও নিশ্চিতরূপে বলতে পারছে না !
অবশেষে, সর্বশেষ খুন সংগঠিত হবার স্থানে দেখা দিল বিচিত্র সব চেহারা ! কেউ ধরা পড়ল, কেউ এগিয়ে এসে ধরা দিল। আদালতে শুরু হল আরেক টুইস্ট। প্রমাণ থাকার পরেও নিশ্চিত খুনিও বুঝি পার পেয়ে যাবে। কিন্তু কি সেই যুক্তি বা তথ্য যার কাছে হার মানছে জুরি বোর্ড ? এদিকে ডেনি চাইছে এই সুযোগে অ্যাঞ্জেলার উপর থেকে সকল বদনাম ঘুচে যাক। কিন্তু ঘুচে গেলেই বা কি , অ্যাঞ্জেলা আছে কোথায় যে ডেনি তাকে পাবে ? আবার ম্যাটের শেষ সচেতন চিন্তাটাই ছিল লিসার সম্মান। লিসারই বা হবে কী ?
সব মিলিয়ে জমজমাট একটি থ্রিলার যাতে আছে প্রচুর প্রশ্ন-রহস্য-খুন-আর উদ্দাম যৌনতা। মাষ্টার অব টুইস্ট – শেলডনের আউটলাইনে লেখা এ কাহিনিতে লেখিকা টিলি ব্যাগশ শেষ পর্যন্ত, এমনকি সব পর্দা উঠার পরেও এক টুইস্ট রেখে দিয়েছেন। দারুণ একটি বই ।
“অনিন্দ্য প্রকাশ”-এর ব্যানারে ৫০০ টাকা মূল্যের ৩০৪ পৃষ্ঠার এই টানটান বইটিতে পাঠকের মন ধরে রাখতে অনুবাদকও সফল। বইটি থ্রিলার এবং শেলডন প্রিয় “বইপোকা”দের ভাল লাগবে।
0 Comments