বাংলা সাহিত্যের অমর কথাসাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ( কিন্তু অত্যন্ত আক্ষেপের সাথে বলতে হচ্ছে তিনি বোধহয় আর অমর নেই, আমি বেশ কয়েকটি বই বিষয়ক গ্রুপ এ জয়েন করেছি কিন্তু কোথাও কাউকে আমি এই অসামান্য লেখক সম্পর্কে একটা টুঁ
শব্দও লিখতে দেখিনি, যেন মনে হচ্ছিল তিনি বোধহয় জন্মাননি আমাদের এই বাংলায়, হয়ত লেখেন নি কোনও শব্দ কোথাও, তাই তো ওপার বাংলার লেখকদের প্রশংসায় -কথায় আমরা মুখে ফেনা তুললেও নিজেদের এই সোনার খনির কথা ভুলে গিয়ে অপরের দিকে চেয়ে আছি। আমরা একালের পাঠক, স্মার্ট ফোন ইউজ করা পাবলিক, লেখক বেঁচে থাকেন পাঠকের মাঝে, পাঠক যদি লেখক-কে স্মরণ করে তবেই লেখকের হাজার বছর বেঁচে থাকা, যেমন ভাবে বেঁচে আছেন হোমার, শেখ সাদি, ওমর খৈয়াম আরও নানান লেখক, আর বর্তমান কালে লেখক-কে বাঁচিয়ে রাখার কৌশল তো আরও চমকপ্রদ...কত কত টেকনিক, কিন্তু এত এত টেকনিকের কিছুই আমি দেখলাম না আমদের দেশের এই অসম্ভব মেধাবী আর তীক্ষ্ণ লেখকটির লেখাকে অমর করিয়ে রাখার ব্যাপারে, তার লেখা সংগ্রহের কোনও উৎসাহও আমি কার মধ্যে পেলাম না, আমি নিজে পারলে হয়ত আমি নিজেই নিতাম, কিন্তু পারি না বলেই এই পোস্ট ) । খুব বেশি লেখা তিনি লেখেন নি। কিন্তু যে কয়েকটি তিনি লিখেছেন প্রতিটি একেকটি মাস্টারপিস। তিনি তার সারাজীবনে উপন্যাস লিখেছেন মাত্র দুইটি, তার গল্পগ্রন্থের সংখ্যা পাঁচটি, ছোটদের জন্যেও তিনি লিখেছেন, লিখেছেন প্রবন্ধ। জীবনকে যদি খুব কাছ থেকে দেখতে চান তাহলে আমার প্রথম পরামর্শ হবে তাঁর বই পড়া। নেই সুনীলের মতন রোম্যান্টিক আখ্যান, নেই শীর্ষেন্দুর সবসময় ভালো মানুষকে জিতিয়ে দেয়ার প্রবণতা, নেই হুমায়ুনের মতন জীবনকে সিম্পল্ভাবে দেখার রসবোধ, আছে শুধু নিরেট কঠিন বাস্তবতা, কাঠফাটা রোদে, খালি পায়ে, শুকনো মুখে, পিচঢালা পথে হেটে বেড়ান যে বাস্তবতা ইলিয়াস আমাদের পরিচয় করিয়ে দেন সেই বাস্তবতার সাথে, নগ্নভাবে। তাঁর ভাষা, তাঁর লেখার স্টাইল এমন কোনও লেখক নাই যে তাঁর সাথে মিলবে তিনি এক, অনন্য, স্বতন্ত্র এবং অসাধারণ মেধার অধিকারী এক লেখক। তাঁর লেখার ভঙ্গি এবং তাঁর লেখক দৃষ্টিভঙ্গি এতটাই উন্নত যে আপনাকে নিয়ে যাবে সেই পর্যায়ের লোকের কাছে যাদের নিয়ে আজ পর্যন্ত এক তিনি ছাড়া কেউ লেখেন নি। তাঁর ক্যারেকটারগুলো নিয়ে সামান্য কথা বললে হয়ত পরিষ্কার হবে ধারণাটা, মাইক ভাড়া দেয়া লোক, গোরস্থানের হুজুর, রিকশাচালক সাধারন মানুষ তো সাথে আছেই, আরও অনেক কথা তিনি বর্ণনা করে গেছেন তাদের মতো করেই। তিনি একজন রিয়েল মাস্টারপিস। আমাদের এই দুর্ভাগা দেশে আলো দেয়া এক অবিনশ্বর সূর্য, আমরাই পাপী, নিতে পারিনি তাঁর আলোর রেণু গায়ে মাখতে।
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস (১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৩ - ৪ জানুয়ারি ১৯৯৭) বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক। তিনি একজন স্বল্পপ্রজ লেখক ছিলেন। দুইটি উপন্যাস, গোটা পাঁচেক গল্পগ্রন্থ আর একটি প্রবন্ধ সংকলন এই নিয়ে তাঁর রচনাসম্ভার। বাস্তবতার নিপুণ চিত্রণ, ইতিহাস ও রাজনৈতিক জ্ঞান, গভীর অন্তর্দৃষ্টি ও সূক্ষ্ম কৌতুকবোধ তাঁর রচনাকে দিয়েছে ব্যতিক্রমী সুষমা। বাংলা সাহিত্যে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর পরেই তিনি সর্বাধিক প্রশংসিত বাংলাদেশী লেখক।
জীবনী
আখতারুজ্জামান মোহাম্মদ ইলিয়াস ১৯৪৩ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের গাইবান্ধা জেলার গোটিয়া গ্রামে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাক নাম মঞ্জু। তাঁর পৈতৃক বাড়ি বগুড়া জেলায়। তাঁর বাবা বদিউজ্জামান মোহাম্মদ ইলিয়াস পূর্ব বাংলা প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য (১৯৪৭-১৯৫৩) এবং মুসলিম লীগে পার্লামেন্টারি সেক্রেটারি ছিলেন। তাঁর মায়ের নাম বেগম মরিয়ম ইলিয়াস। আখতারুজ্জামান বগুড়া জিলা স্কুল থেকে ১৯৫৮ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা এবং ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৬০ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্স ও মাস্টার্স পাস করেন (১৯৬৪)।
আখতারুজ্জামান মোহাম্মদ ইলিয়াসের কর্মজীবন শুরু হয় জগন্নাথ কলেজে প্রভাষক পদে যোগদানের মাধ্যমে। এরপর তিনি মিউজিক কলেজের উপাধ্যক্ষ, প্রাইমারি শিক্ষা বোর্ডের উপ-পরিচালক, ঢাকা কলেজের বাংলার প্রফেসর ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি মফিজউদ্দিন শিক্ষা কমিশনের সদস্য ছিলেন। ১৯৭৩ সালে তিনি বিয়ে করেন। তাঁর স্ত্রীর নাম সুরাইয়া তুতুল। মুক্তিযুদ্ধের সময় পরিচিত মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দেন, গোপনে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। তাঁর লেখা প্রতিশোধ, অন্য ঘরে অন্য স্বর, খোঁয়ারি, মিলির হাতে স্টেনগান, অপঘাত, জাল স্বপ্ন স্বপ্নের জাল, রেইনকোট প্রভৃতি গল্পে পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে উঠে এসেছে মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধপরবর্তী রাজনৈতিক এবং সামাজিক বাস্তবতা। ১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠিত হলেও সরকারি কলেজের শিক্ষক হিসেবে বাকশালে যোগ দেওয়ার চাপ থাকলেও যোগ দেন নি।
গ্রন্থ তালিকা
- চিলেকোঠার সেপাই (১৯৮৭) [PDF]
- খোয়াবনামা (১৯৯৬) [PDF]
ছোট গল্প সংকলন
- অন্য ঘরে অন্য স্বর (১৯৭৬)
- খোঁয়ারি (১৯৮২)
- দুধভাতে উৎপাত (১৯৮৫)
- দোজখের ওম (১৯৮৯)
- জাল স্বপ্ন, স্বপ্নের জাল (১৯৯৭)
- প্রবন্ধ সংকলন
- সম্পাদনা
- সংস্কৃতির ভাঙ্গা সেতু (২২টি প্রবন্ধ)
- ছোট গল্প তালিকা
- সম্পাদনা
- প্রেমের গপ্পো
- রেইনকোট
- জাল স্বপ্ন, স্বপ্নের জাল
- ফোঁড়া
- কান্না
- নিরুদ্দেশ যাত্রা
- যুগলবন্দি
- ফেরারী
- অপঘাত
- পায়ের নিচে জল
- দুধভাতে উৎপাত
- সন্তু
- ঈদ
- মিলির হাতে স্টেনগান
রচনাসমগ্র ০১ - আখতারুজ্জামান ইলিয়াস [PDF]
0 Comments