নামাযের ফযীলতে ২৫টি সুসংবাদ
নামাযের ফযীলতে ২৫টি সুসংবাদ
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুলল্লাহ।
সম্মানিত বন্ধুরা, আজ আমরা জানব
কুরআনও সহীহ হাদীসের আলোকে
নামাযের ফযীলত সম্পর্কে
২৫টি
সুসংবাদ।
বিষয়টি ইনশাআল্লাহ আমাদেরকে
নামাযে আরও যত্নবান হওয়ার ক্ষেত্রে
সাহায্য করবে। তাহলে আসুন আমরা
বিষয়টি একটু মনোযোগ সহকারে পড়ি।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে নামাযী
হিসেবে কবুল করে সৌভাগ্যশালীদের
অন্তর্ভুক্ত করুন।
আমীন।
ছালাত সর্বোত্তম আমল:
রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম)কে প্রশ্ন করা হল কোন
আমলটি সর্বোত্তম? তিনি বললেন, সময়মত
ছালাত আদায় করা।
(মুসলিম)
ছালাত বান্দা এবং প্রভুর মাঝে সম্পর্কের মাধ্যম:
রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) বলেন,
তোমাদের কেউ যখন ছালাত আদায়
করে, তখন সে তার পালনকর্তার সাথে
গোপনে কথা বলে।
(বুখারী)
ছালাত দ্বীনের মূল খুঁটি:
রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) বলেন,
সবকিছুর মূল হচ্ছে ইসলাম। তার
(ইসলামের) মূল স্তম্ভ হচ্ছে ছালাত এবং
তার (ইসলামের) সর্বোচ্চ চুড়া হচ্ছে
জিহাদ।
(তিরমিযী)
ছালাত হচ্ছে আলোকবর্তিকা:
রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) বলেন,
ছালাত হচ্ছে (কিয়ামতের দিন
বান্দার জন্য) নূর বা আলোকবর্তিকা।
(মুসলিম, তিরমিযী)
মুনাফেকী থেকে মুক্তি লাভের মাধ্যম
হচ্ছে ছালাতঃ
রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) বলেন,
মুনাফেকদের উপর ফজর ও এশা
ছালাতের চাইতে অধিক ভারী কোন
ছালাত নেই। তারা যদি জানত এ
দু‘ছালাতে কত ছওয়াব রয়েছে, তবে
হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তাতে
উপস্থিত হত।
(বুখারী ও মুসলিম)
ছালাত জাহান্নাম থেকে
নিরাপত্তার গ্যারান্টি:
রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) বলেন,
কখনই জাহান্নামে প্রবেশ করবে না এমন
ব্যক্তি, যে সূর্যোদয়ের পূর্বে ছালাত
আদায় করেছে এবং সূর্যাস্তের-র পূর্বে
ছালাত আদায় করেছে। অর্থাৎ- ফজর ও
আছর ছালাত।
(মুসলিম)
নিশ্চয় ছালাত মানুষকে অশ্লীল ও
গর্হিত কাজ থেকে বিরত রাখে:
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন,
ﺍﺗْﻞُ ﻣَﺎ ﺃُﻭﺣِﻲَ ﺇِﻟَﻴْﻚَ ﻣِﻦْ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏِ ﻭَﺃَﻗِﻢْ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓَ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓَ ﺗَﻨْﻬَﻰ
ﻋَﻦْ ﺍﻟْﻔَﺤْﺸَﺎﺀِ ﻭَﺍﻟْﻤُﻨْﻜَﺮِ
কুরআনের যা আপনার কাছে ওহী করা
হয়েছে তা পাঠ করুন এবং ছালাত
প্রতিষ্ঠা করুন। নিশ্চয় ছালাত অশ্লীল ও
গর্হিত বিষয় থেকে বিরত রাখে।
(সূরা
আনকাবূত- ৪৫)
সকল কাজে সাহায্য লাভের মাধ্যম
ছালাত:
আল্লাহ্ বলেন,
ﻭَﺍﺳْﺘَﻌِﻴﻨُﻮﺍ ﺑِﺎﻟﺼَّﺒْﺮِ ﻭَﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓِ
তোমরা ছবর (ধৈর্য) এবং ছালাতের
মাধ্যমে (আল্লাহ্র কাছে) সাহায্য
প্রার্থনা কর।
(সূরা বাক্বারা- ৪৫)
একাকী ছালাত আদায় করার চেয়ে
জামাতে আদায় করা অনেক উত্তম:
রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) বলেন,
একাকী ছালাত আদায় করার চেয়ে
জামাতের সাথে ছালাত আদায় করা
পঁচিশ গুণ বেশী মর্যাদা সম্পন্ন।
(বুখারী
ও মুসলিম)
ফেরেশতারা মুছল্লীর জন্য মাগফেরাত
ও রহমতের দুয়া করেন:
রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) বলেন,
তোমাদের কোন ব্যক্তি ছালাত আদায়
করার পর যতক্ষণ স্বীয় জায়নামাজে
বসে থাকে ততক্ষণ ওযু ভঙ্গ না হওয়া
পর্যন্ত ফেরেশতারা তার জন্য দু‘আ করতে
থাকে। বলে, হে আল্লাহ্ তাকে ক্ষমা
কর, তাকে রহম কর।
(বুখারী ও মুসলিম)
ছালাত গুনাহ্ মাফের মাধ্যম:
রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) বলেন,
যে ব্যক্তি ছালাতের জন্য ওযু করবে
এবং ওযুকে পরি পূর্ণরূপে করবে। তারপর
ফরয ছালাত আদায় করার জন্য পথ চলবে;
অতঃপর তা মানুষের সাথে বা
জামাতে বা মসজিদে আদায় করবে,
তাহলে আল্লাহ্ তার গুনাহ্ সমূহ ক্ষমা
করে দিবেন।
(মুসলিম)
ছালাতের মাধ্যমে শরীর থেকে
গুনাহগুলো বের হয়ে যায়:
রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) বলেন,
তোমরা কি মনে কর, তোমাদের কারো
ঘরের সামনে যদি একটি নদী প্রবাহিত
থাকে। এবং প্রতিদিন সে উহাতে
পাঁচ বার গোসল করে, তবে তার শরীরে
কোন ময়লা থাকবে কি? তাঁরা
(সাহাবিগণ) বললেন: কোন ময়লাই
বাকী থাকতে পারে না। তিনি
বললেন: এরূপ উদাহরণ হল পাঁচ ওয়াক্ত
ছালাতের ক্ষেত্রেও। এভাবে
ছালাতের বিনিময়ে আল্লাহ্
নামাযীর যাবতীয় (ছোট) পাপগুলো
মোচন করে দেন।
(বুখারী ও মুসলিম)
ছালাতের জন্য মসজিদে গমন করলে এক
পদে গুনাহ মোচন হয় অন্য পদে মর্যাদা
উন্নীত হয়:
রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) বলেন,
যে ব্যক্তি নিজ গৃহে ওযুর মাধ্যমে
পবিত্রতা অর্জন করে, তারপর আল্লাহ্র
কোন এক ঘরে (মসজিদে) যায় আল্লাহ্র
কোন একটি ফরজ ছালাত আদায় করার
জন্য, তবে তার পদক্ষেপগুলোর বিনিময়ে
একটি পদে একটি গুনাহ মোচন করা হয়
অন্য পদে একটি মর্যাদা উন্নীত হয়।
(মুসলিম)
আগেভাগে ছালাতে আসার মর্যাদা:
রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) বলেন,
মানুষ যদি জানত আজান দেয়া এবং
প্রথম কাতারে ছালাত আদায় করার
প্রতিদান কি, তাহলে (কে আজান
দেবে বা কে প্রথম কাতারে ছালাত
আদায় করবে তা নির্ধারণ করার জন্য)
তারা পরস্পর লটারি করতে বাধ্য হত।
তারা যদি জানত আগেভাগে
ছালাতে আসাতে কি প্রতিদান
রয়েছে তবে, তারা প্রতিযোগিতায়
নেমে পড়ত।
(বুখারী ও মুসলিম)
ছালাতের জন্য অপেক্ষাকারী
ছালাতরতই থাকে:
রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) বলেন,
তোমাদের কোন ব্যক্তি ছালারতই
থাকে যতক্ষণ ছালাত তাকে বাধা
দিয়ে রাখে। শুধু ছালাতই তাকে নিজ
গৃহে বা পরিবারের কাছে ফিরে
যাওয়া থেকে বিরত রাখে।
(বুখারী ও
মুসলিম)
ছালাতে আমীন বলার দ্বারা পূর্বের
গুনাহ্ ক্ষমা হয়ে যায়:
রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) বলেন,
তোমাদের কোন ব্যক্তি যখন (সূরা
ফাতিহা শেষে) ‘আমীন’ বলে। আর
ফেরেশতারা আসমানে বলে ‘আমীন’।
তাদের একজনের আমীন বলা অন্য জনের
সাথে মিলে গেলে তার পূর্বের গুনাহ্
ক্ষমা হয়ে যায়।
(বুখারী ও মুসলিম)
ছালাতের মাধ্যমে আল্লাহ্র
নিরাপত্তা লাভ করা যায়:
রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) বলেন,
যে ব্যক্তি সকালের (ফজর) ছালাত
আদায় করে সে আল্লাহ্র
জিম্মাদারিতে হয়ে যায়। ভেবে দেখ
হে আদম সন্তান! আল্লাহ্ যেন তার
জিম্মাদারিতে তোমার কাছে কোন
কিছু চেয়ে না বসেন।
(মুসলিম)
ছালাতের দ্বারা কিয়ামত দিবসে
পরিপূর্ণ নূর লাভ করা যায়:
রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) বলেন,
যারা অন্ধকারে (অর্থাৎ- ফজরের
ছালাত আদায় করার জন্য) মসজিদে গমন
করে, তাদেরকে কিয়ামত দিবসে
পরিপূর্ণ নূরের সুসংবাদ দিয়ে দাও।
(আবূ
দাঊদ, তিরমিযী)
আছর ও ফজরের ছালাত আদায়কারীর জন্য
জান্নাতের সুসংবাদ:
রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) বলেন,
যে ব্যক্তি দুঠান্ডার সময়ের (আছর ও ফজর)
ছালাত আদায় করবে, সে জান্নাতে
প্রবেশ করবে।
(বুখারী ও মুসলিম)
পুলসিরাত পার হয়ে জান্নাতে
যাওয়ার সুসংবাদ:
রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) বলেন,
প্রত্যেক পরহেজগার ব্যক্তির গৃহ হচ্ছে
মসজিদ। আর যে ব্যক্তির গৃহ হবে মসজিদ
আল্লাহ্ তার জন্য করুণা ও দয়ার
জিম্মাদার হয়ে যান এবং আরও
জিম্মাদারি নেন পুলসিরাত পার হয়ে
আল্লাহ্র সন’ষ্টি জান্নাতে যাওয়ার।
(ত্ববরানী, শায়খ আলবানী
হাদছীটিকে ছহীহ বলেছেন।)
ছালাত শয়তান থেকে নিরাপদ থাকার
মাধ্যম:
রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) বলেন,
কোন গ্রামে যদি তিনজন লোক থাকে
এবং তারা জামাতের সাথে ছালাত
প্রতিষ্ঠা না করে তবে শয়তান তাদের
উপর প্রাধান্য বিস্তার করে। সুতরাং
তোমরা জামাত বদ্ধ থাক। কেননা দুল ছুট
একক ছাগলকে নেকড়ে বাঘ খেয়ে
ফেলে।
(আহমাদ, আবু দাউদ, নাসাঈ, দ্র:
ছহীহুল জামে হা/ ৫৭০১)
ছালাত আদায়কারীর জন্য
ফেরেশতারা সাক্ষ্য দান ককরে:
রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) বলেন,
রাতে একদল ফেরেশতা এবং দিনে
একদল ফেরেশতা তোমাদের নিকট
আআগমনকরে। তারা ফজর ছালাত এবং
আছর ছালাতে পরস্পর মিলিত হয়। তারপর
যেসকল ফেরেশতা রাতে তোমাদের
নিকট আআগমনকরেছিল তারা চলে যায়,
তখন আল্লাহ্ তাদেরকে জিজ্ঞেস
করেন- অথচ তিনি সর্বাধিক জানেন-
আমার বান্দাদেরকে কি অবস্থায়
ছেড়ে এসেছ? তারা বলে, তাদেরকে
রেখে এসেছি এমন অবস্থায় যে তারা
ছালাত আদায় করছে এবং তাদেরকে
এমন অবস্থায় আমরা পেয়েছি যে তারা
ছালাত আদায় করছে। অন্য বর্ণনায় আছে,
আমরা যখন তাদের কাছে যাই তখন
তারা ছালাতরত ছিল এবং যখন
তাদেরকে ছেড়ে আসি তখনও তারা
ছালাতরত ছিল। সুতরাং তাদেরকে
হিসাবের দিন ক্ষমা করুন।
(বুখারী ও
মুসলিম, দ্র: ছহীহ্ তারগীব ও তারহীব
হা/৪৬৩)
পূর্ণ রাত নফল ছালাত আদায় করার
ছওয়াব:
রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) বলেন,
যে ব্যক্তি এশা ছালাত জামাতের
সাথে আদায় করবে, সে যেন অর্ধ
রাত্রি নফল ছালাত আদায় করল, এবং
যে ব্যক্তি ফজর ছালাত জামাতের
সাথে আদায় করবে, সে যেন পূর্ণ
রাত্রি নফল ছালাত আদায় করল।
(মুসলিম)
ছালাতই কিয়ামত দিবসে আরশের
নীচে ছায়া লাভের মাধ্যম:
রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) বলেন,
কিয়ামত দিবসে সাত ধরণের ব্যক্তিকে
আরশের নীচে ছায়া দান করা হবে যে
দিন আল্লাহ্র আরশের ছায়া ব্যতীত
কোন ছায়া থাকবে না- তাদের মধ্যে
একজন হচ্ছে এমন ব্যক্তি যার হৃদয় লটকানো
থাকে মসজিদে। অর্থাৎ যখনই
ছালাতের সময় হয় সে ছুটে যায়
মসজিদের পানে।
(বুখারী ও মুসলিম)
মুনাফেকী এবং জাহান্নাম থেকে
মুক্তি লাভ:
রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) বলেন,
যে ব্যক্তি আল্লাহ্র জন্য চল্লিশ দিন
(২০০ ওয়াক্ত) জামাতের সাথে ইমামের
তাকবীরে তাহরীমার সাথে ছালাত
আদায় করবে তার জন্য দু‘টি মুক্তি নামা
লিখা হবে।
১) জাহান্নাম থেকে মুক্তি
এবং
২) মুনাফেক্বী থেকে মুক্তি।
(তিরমিযী, দ্র: ছহীহুল জামে হা/৬৩৬৫)
==============
(জুবাইল দাওয়া এন্ড গাইডেন্স সেন্টার
প্রকাশিত ফ্রি বই, লিফলেট পড়ুন,
ক্যাসেট সংগ্রহ করুন
ছহীহ আক্বীদার ভিত্তিতে জীবন গড়ুন)
ছালাতের ফযীলতে
মূল: ঈদ আল আনাযী
অনুবাদ: মুহাঃ আবদুল্লাহ্ আল্ কাফী
দাঈ, জুবাইল দাওয়া এন্ড গাইডেন্স
সেন্টার, সঊদী আরব।
পো: বক্স নং ১৫৮০, জুবাইল- ৩১৯৫১
ফোন: ০৩-৩৬২৫৫০০ এ, ১০১১ ফ্যাক্স:
৩৬২৬৬০০ মোবা: ০০৯৬৬৫১৮৪৭৬৪৬
mohdkafi12@yahoo.com
0 Comments