Ticker

50/recent/ticker-posts

আমিই মিসির আলী PDF


আপনিই মিসির আলি? 

হ্যাঁ। মেয়েটা এমনভাবে তাকাল যেন সে নিজের চোখকে ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না, আবার অবিশ্বাসও করতে পারছে না। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলা থেকে নিজেকে সামলে নিয়ে নরম গলায় বলল, আমি ভীষণ জরুরি একটা চিঠি নিয়ে এসেছি। চিঠিটা এই মুহূর্তে আপনাকে না দিয়ে একটু পরে দেই? নিজেকে সামলে নেই। আমি মনে মনে আপনার চেহারা যেমন হবে ভেবেছিলাম, অবিকল সে রকম হয়েছে। মিসির আলি মেয়েটির দিকে তাকালেন। সরল ধরনের মুখ। যে মুখ অল্পতেই বিস্মিত হয়।

আমিই মিসির আলী PDF

বইয়ের নামঃ আমিই মিসির আলি

লেখকের নামঃ হুমায়ুন আহমেদ

প্রকাশকঃ অন্যপ্রকাশ
প্রকাশকালঃ ২০০০
সাইজঃ ১০ এমবি
মোট পাতাঃ ৯৫ টি
বইয়ের ধরণঃ রহস্য উপন্যাস
সিরিজঃ মিসির আলি (Misir Ali,#১২ )
ফরম্যাটঃ পিডিএফ (PDF)

Download: Click Here


বারান্দায় চড়ুই বসলে অবাক হয়ে বলে, ও মাগো কী অদ্ভুত একটা চড়ুই! মেয়েটার সুন্দর চেহারা। মাথার চুল লালচে এবং কোঁকড়ানো না হলে আরো সুন্দর লাগত। বয়স কত হবে-পঁচিশ ছাব্বিশ। নাকি আরো কম? কপালে টিপ দিয়েছে, টিপটা ঠিক মাঝখানে হয় নি। বঁটা দিকে সরে আছে। মেয়েরা সাধারণত টিপ দেওয়ার ব্যাপারে খুব সাবধানী হয়। টিপ এক পাশে হলে কপালে সতীন জোটে-তাই বাড়তি সাবধানতা। এই মেয়েটা হয়তো তেমন সাবধানী নয়, কিংবা এই গ্ৰাম্য কুসংস্কারটা জানে না। মেয়েটা চোখে কাজল দিয়েছে। গায়ের রঙ অতিরিক্ত সাদা বলেই চোখের কাজলটা ফুটে বের হয়েছে। শ্যামলা মেয়েদের চোখেই কাজল মানায়, ফৰ্মা মেয়েদের মানায় না। তার পরেও এই মেয়েটিকে কেন জানি মানিয়ে গেছে। সে পরেছে সবুজ রঙের শাড়ি। এখনকার মেয়েরা কি সবুজ রঙটা বেশি পরছে? প্রায়ই তিনি সবুজ রঙের শাড়ি পরা তরুণীদের দেখেন।

রঙ নিয়ে কোনো গবেষণা কি হয়েছে? র্যানডম স্যাম্পলিং করা যেতে পারে। প্রতিদিন পঞ্চাশটা করে মেয়ের শাড়ির রঙ দেখা হবে। একেক দিন একেক জায়গায়। আজ নিউমার্কেটে, কাল গুলিস্তানে, পরশু। ধানমণ্ডি। পরীক্ষাটা একমাস ধরে করা হবে। তারপর করা হবে। গসিয়ান কার্ড। মিসির আলি ভুরু কুঁচকালেন। পরীক্ষাটা যতটা সহজ মনে হচ্ছে তত সহজ হবে। না। স্ট্যাটিসটিক্যাল মডেল দাঁড় করানো কঠিন হবে। মূল গ্রুপের ভেতর থাকবে সাব গ্রুপ। বিবাহিত মেয়ে, অবিবাহিত মেয়ে। উনিশ বছরের কম বয়সী মেয়ে, উনিশ বছরের চেয়ে বেশি বয়সের মেয়ে, ডিভোর্সড মেয়ে, বিধবা মেয়ে। মেয়েটি অবাক হয়ে বলল, মনে হচ্ছে কোনো একটা বিষয় নিয়ে আপনি খুব দুশ্চিন্তা করছেন? কী নিয়ে দুশ্চিন্তা করছেন?
মিসির আলি বললেন, দুশ্চিন্তা করছি না তো। আপনি অবশ্যই দুশ্চিন্তা করছেন। দুশ্চিন্তা না করলেও চিন্তা করছেন। কেউ যখন গভীর কিছু নিয়ে চিন্তা করে-তখন বোঝা যায়। তুমি বুঝতে পার? হ্যাঁ পারি। ও আচ্ছা, আমি তো পরিচয়ই দেই নি। আপনি বসতে বলার আগেই বসে পড়েছি। আমার ডাক নাম লিলি! ভালো নামটা আপনাকে বলব না। ভালো নামটা খুবই পুরোনো টাইপ। দাদি নানিদের সময়কার নাম। এখন বলতে লজ্জা লাগছে। মিসির আলি বললেন, পুরোনো জিনিস তো আবার ফিরে আসছে। পুরোনো প্যাটার্নের গয়নাকে এখন খুব আধুনিক ভাবা হচ্ছে। যত আধুনিকই ভাবা হোক, আমার ভালো নামটাকে কেউ কখনো আধুনিক ভাববে না। আচ্ছা আপনাকে বলে ফেলি, আপনি কিন্তু হাসতে পারবেন না। আমি হাসব না। আমি খুব সহজে হাসতে পারি না।

এই যে আমি বকবক করে যাচ্ছি, আপনি মনে মনে খুবই বিরক্ত হচ্ছেন। কিন্তু কিছুতেই সেটা প্রকাশ করছেন না। আপনি নিজেকে ব্যস্ত রাখার জন্যে অন্য কিছু ভাবছেন। আচ্ছা সত্যি করে বলুন তো, আপনি কি আমার বকবকানিতে বিরক্ত হচ্ছেন না? মিসির আলি জবাব না দিয়ে চুপ করে রইলেন। তিনি যথেষ্ট বিরক্ত হচ্ছেন।



রিভিউ


শুরু কথা: পাঠাক মহলে একটা কথা শুনেছিলাম, "হুমায়ূন আহমেদ" শুধুমাত্র মধ্যবিত্ত পরিবারের যাপিত জিবনের আনন্দ-বেদনা,সুখ-দুঃখ,ট্রাজেডি, নগরবাসী ও গ্রামবাসীর সাদামাটা কাহিনীই উপন্যাসে বেশি লেখে। প্রথমে দু'একটা ভালো লাগবে, পরে বিরক্ত লাগবে।

আমিও ঠিক এমনটি বোধ করছিলাম কিছুদিন যাবৎ। "তিথীর নীল তোয়ালে" বইটা পড়ার সময় বিরক্তই লেগেছিলো।

"আমিই মিসির আলী" বইটা হাতে নিলাম। অনেকটা বিরক্তভাবেই নিলাম। পড়ার তেমন ইচ্ছা ছিলোনা। কিন্তু "মিসির আলী" হুমায়ূন সাহেবের অন্যতম সেরা চরিত্রের একটি।

 মুলত চরিতটা কেমন? "হিমুর" মত বিরক্তিকর নয়তো!(ব্যক্তিগত মত) এটা জানার জন্যেই অনিহা সত্ত্বেও শুরু করলাম।

৯৬পৃষ্ঠা, ঢাকা থেকে দোহার।বাসের মধ্যেই শেষ করতে হবে। এ'রকম একটা গা-ছাড়া ভাব নিয়ে শুরু করলাম। (বই পড়ার জন্যে আমার পছন্দের সময় হলো গাড়িতে তাই ব্যাগে সর্বদা বই রাখি)


বই সম্পর্কে: ১৯ নাম্বার পৃষ্ঠায় যখন সুলতান সাহেবের চিঠি পড়ছিলো মিসির আলী, এবং টোপের

অংশে আসলো, নড়েচড়ে বসলাম। কোন কারন ছাড়াই ভিতরে একটা নীরব থ্রিল অনুভব করলাম।

আর যখন সুলতান সাহেবের বাগানবাড়িতে মিসির আলী আসলো, তখন বাড়ির বর্ণনা পড়ে আমার

এমন মিষ্টি থ্রিল অনুভব হলো যা সাধারণত স্পেনীশ থ্রিলার দেখার সময় হয়। বই যতই সামনে

চলছিলো আমার ভিতরের উত্তেজনাও বাড়ছিলো।

 কী আছে এই বাড়িতে? কেন ডেকে আনা হলো মিসির আলীকে এই বাড়িতে ?

জাষ্ট! লোম দাঁড়িয়ে যাওয়ার মত অবস্থা।

উপরে যতটুকু বললাম এর থেকে বেশি বললে স্পয়লার হয়ে যাবে , তাই আর না বলাই ভালো ।

তবে "মিসির আলী" সম্পর্কে এতদিন যা শুনেছি,এবং বইয়ের শুরুতে হুমায়ূন সাহেব "মিসির

আলী"র। পরিচয় যা দিলো, তাতে আমার মনে যে, সাদামাটা "মিসির আলী"র রূপ তৈরি হয়েছে,

সম্পূর্ণ তার উল্টোটাই পেয়েছি।

আর যেরকম পেলাম আমি পুরোই ফিদা! এতটাই ফিদা যে, আমার একটা ইচ্ছা ছিলো হুমায়ূন

আহমেদে"র বই কখনো কিনে পড়বো না।

 এটার কারনও আছে অনেকগুলো, তারকমধ্যে অন্যতম হলো, সবার কাছেই উনার বই পাওয়া যায়।

কিন্তু এই বইটি পড়ার পড় ঠিক করেছি, মিসির আলী নিয়ে সবগুলো বই কিনবো এবং খুব দ্রুত।

আর একটা কথা অকপটে স্বীকার করবো এখন পর্যন্ত "মিসির আলী"ই আমার দেখা হুমায়ূন

আহমেদের সেরা চরিত্র।


Post a Comment

0 Comments