Ticker

50/recent/ticker-posts

সজল আহমেদ এর কবিতা সংগ্রহ


 মা

মা 

যে সন্তান তোমাকে একটা শাড়ি কিনে দিতে পারেনি

একটা জর্দ্দার কৌটোও এনে রাখতে পারেনি

শুকনো মাথা তোমার ভেজাতে পারেনি জুঁই নারিকেল তেলে; সে সন্তানের বেঁচে থেকে খাবি খেয়ে লাভ কী বলো?

যারা আমাকে সার্টিফিকেট উপহার দিয়েছিলো

আজ আমি সেসব মহাবিদ্যালয় গুলোর সামনে কয়েকবার সার্টিফিকেটগুলো জ্বালিয়ে দেবো।

এরপর আমি যাবো বঙ্গভবনে। যে সরকার আমাকে আশা দিয়েছিলো, আমি তাঁর সামনেই পাতাকা দণ্ডের রশি গলায় দিয়ে ঝুলে পরবো যাতে পতাকা উত্তোলন করে শালারা গণপ্রজাতন্ত্রী বলে আর চিল্লাতে না পারে!

মা

শেষবার যেখানে আমি মৃত্যুবরণ করবো;

ওখানেই আমার লাশটার মুখ তুমি পুড়িয়ে দিও।







 পরকাল

ঈশ্বর সেই প্রথম শহীদ সুমাইয়ার প্রতি প্রতিশ্রুতি বদ্ধ ছিলেন, সুমাইয়া কে জান্নাতে নেবেন। বিচারের মাঠে প্রভূ এক সুমাইয়ার নাম ধরে ডাক দিলে সকল সুমাইয়ারা দাঁড়িয়ে গেলো! প্রভূ চিন্তিত হয়ে গেলেন, যেহেতু প্রভূর কমিটমেন্ট ছিলো তিনি এক সুমাইয়াকে জান্নাতে নেবেন। তবে কোন সুমাইয়া তা উল্লেখ করেনি। এক সুমাইয়া কে জান্নাতে নিলে বাকি সুমাইয়ারা পেছনে প্রভূর বদনাম করবে ফলে কাতারে দাঁড়ানো সকল সুমাইয়া কে তিনি জান্নাতে যাওয়ার অনুমতি দিলেন। আমি আশ্চর্য হয়ে দেখলাম আমার প্রাক্তন প্রেমিকা সুমাইয়া যে আমার টাকা মেরে ফয়সালের সম্পদ গড়েছে সেও সুমাইয়াদের কাতারে দিব্যি জান্নাতের রোডের দিকে যাচ্ছে! সে যাক। প্রাক্তনের কথা ভাবিনা, প্রাক্তন প্রাক্তনই।

আমি শান্ত হয়ে বসে ভাবছি, কখন আমার নাম ডাকবে। প্রখর রোদ্রে তৃষ্ণায় আমার জিহ্বা তালুর সাথে লেগে আছে। সকল সুমাইয়ারা জান্নাতে যাচ্ছে। এরকম যেতেযেতে কত শত বছর কেটে গেলো কে জানে! এরপর হঠাৎ  প্রভূ ডাক দিলেন, ‘সজল!’

প্রভূর ডাকে আমি উঠে দাঁড়ালাম, আমার সাথে উঠে দাঁড়ালো কয়েক হাজার ছাগল! প্রভূ যারপরনাই চিন্তিত হলেন কেননা সজল নামে সবার জাহান্নাম ধার্য্য করা হয়েছে! আর ছাগলদের জাহান্নাম, জান্নাত কোনটাই ধার্য্য নেই। ফলে প্রভূ আমাকে জাহান্নামে না পাঠিয়ে তার দূতকে বললেন, ‘একে ছাগলদের সাথে একত্রে পুঁতে দাও মাটিতে মিশে যাক।’



তাবাস্সুম

সেদিন তাবাস্সুম আমাকে ভাইয়া ডাকার পর প্রচণ্ড ব্যথাতুর আমি প্রভূ কে ফরিয়াদ করি, ‘হে প্রভূ! যেন তাবাস্সুম আমার সত্যিকারের বোন হয়ে যায়।’ প্রভূ আমাকে জানালেন, যদিও এটা সিস্টেম বহির্ভূত তবুও পুরানো নথীসমূহ সব দেখে অবশ্যই জানাবেন। 


প্রভূর সাথে আমার কোন কমিটমেন্ট হলোনা যদিও তবুও আমি জানতাম, প্রভূ কখনো তাঁর গোলামকে নৈরাশ করেন না।


বেশ কিছুদিন পর প্রভূ আমাকে ডাক দিলেন, ‘সজল! ’

‘জ্বী প্রভূ! কোন উপায় কী পেয়েছেন?’

খুব জোরে হাসতে হাসতে প্রভূ জবাব দিলেন, ‘হ্যাঁ। পুরোনো নথী দেখেছি। তাবাস্সুমের মা তোমার বাবার কলেজ লাইফের জাস্টফ্রেন্ড ছিলো। তিনমাসের সময় তাবাস্সুমের সহজ সরল বাবাটা বয়ফ্রেন্ড হয়ে ফেঁসে গেছে!’


আমি হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছিলাম না! অদূরে তাবাস্সুম আসছে। প্রভূর গতিও ভালো ঠেকছিনা! সত্যিকারের ভাইয়া হওয়ার আগে আমাকে এখন ঝেড়ে দৌঁড়াতে হবে!




উপহার 

যেদিন তোমার মৃত্যু হবে

আমার পাপিষ্ঠ হাত

তোমার লাশ ছোঁবে

যেন পৃথিবীর সব ক্ষুধা পেটে

তোমার মাংস চিবাবো ধাঁড়ালো দাঁতে।

তুমি কিছুই বলতে পারবেনা

অথচ সব দেখছো

যেন পাওনা তোমার

নিয়তি মেনেই নিয়েছো।

কবরে জমা রবে শুধু হাঁড়

আমি খাদক তোমার

লাশই আমার শ্রেয় উপহার।



চলে যায়

চলে যায়, যায় চলে সাথে নিয়ে ভিষন মায়া

চলে যায় যে কঠিন তাঁরে পুনঃ ফিরে পাওয়া

এই পথে ফের সে মাড়ে নাকো পা

হেঁটে হেঁটে দূরে যায় ফিরে চায় না।

ভেঙে বুক খেয়ে সুখ দূরে গেলে পাখি

খাচাতে ফিরবেনা করো যত  ডাকাডাকি

কাঁচ ভাঙা কভূ আর জোড়া লাগেনা

গেলে চলে আর পাখি ফিরে আসেনা।

পাখি গেলে সাথে যায় পাখির কায়া

গিলে খাও ছিড়ে যাওয়া বিদীর্ণ কলিজা-

কিরিচে কোঁপাও জমে থাকা সকল মায়া;

কাঁদো কেন মায়া বুকে ওগো বেহায়া?

পৃথিবীর বুকে আরো আছে কতশত পাখি

পারো যদি নাম ধরে করো ডাকাডাকি

খাচা যদি থাকে তবে আরো পাবে পাখি

চলে গেলে তাঁর তরে ভিজিওনা আঁখি

পুরোনো পাখির তুমি শোক ভুলে যাও

নতুন পাখিরে এবার বুকে তুলে নাও।





পাপ

জাহান্নামে খোদা আমায় ইবলিশ, ফেরাউন, আবু জেহেল, আবু লাহাব এবং নমরুদের পাশের তাওয়ায় সেদ্ধ হওয়ার  ভাগ্য করে দিলেন। যথাক্রমে প্রথম তাওয়াটা ইবলিশের তারপরে নমরুদের কিছুটা দূরে ফেরাউনের তাওয়া। তার পাশে আবু জেহেল তারই পাশে আবু লাহাবের আর শেষের তাওয়াটা আমার। 


এতগুলো কুখ্যাত সেলিব্রিটির সাথে জাহান্নামে আসতে পেরে খুব গর্ব হচ্ছিলো!


আমি মদ খেয়ে ঘোরের মধ্যে আছি কিনা পরীক্ষা করা দরকার। নমরুদের পাশে দাঁড়িয়ে তাকে স্পর্শ করলাম, না ঠিকই আছে! নমরুদ ছুঁয়ে এবার ফেরাউন ছোঁয়ার লোভ হলো। ছুঁলাম। এভাবে প্রত্যেক শালাকেই ছুঁলাম।


 নমরুদ, ফেরাউন, আবু জেহেল, রীতিমত আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। আমি বজ্জাতগুলোকে মৃদু ধমক দিলাম, 'হাসছো কেন?'

নমরুদ বললো, 'এখানে এসেছো কেন?'

'খুন করেছিলাম।'

'কাকে?'

'আব্বা কে।'

সবাই চুপ হয়ে গেলো। আমার দিকে বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে দূরে সড়ে দাঁড়ালো, শুধুমাত্র ইবলিশ আমাকে অভিবাদন জানিয়ে কোলাকুলি করলো।

 বল্ল, তুমি তো আমার ভাই। ক্ষুধা পেয়েছে খুব! চলো একসাথে জাহান্নামের সুস্বাদু ফল খাই।

 আমি রাজী হলাম। 


দুইভাই একসাথে জাহান্নামের ফল খুঁজতে যাবো এমন সময় ঈশ্বর ফেরেশতাদের অনুমতি দিলেন আমাদের সেদ্ধ করার। 


ফল খেতে আর যাওয়া হলোনা। দুই ফেরেশতা আমাকে সহ সকলকে ধরে তাওয়ার গরম তেলে সেদ্ধ করার জন্য নিয়ে যাচ্ছেন।

 প্রথম তাওয়াটা সবচে বেশি উত্তপ্ত। এরপরেরটা একটু কম, তারপরেরটা আরেকটু, তারপরেরটা আরেকটু, তারপরেরটা আরেকটু। আমার তাওয়াটা সবচে কম।

সবাইকে যথাক্রমে নিজেদের তাওয়ার সামনে দাঁড় করানো হলে সবাই আমার দিকে একবার তাকিয়ে ঈশ্বরের দিকে তাকিয়ে অভিযোগ করলো, হে ঈশ্বর! সিনোসিস আমাদের চেয়ে সিনিয়র। আমরা সবাইই আপনার সাথে বিরোধ করেছি ঠিকই কিন্তু নিজ পিতা হত্যা করার মতো সাহসী পাপি ছিলাম না। আপনি বরংচ তাকে ইবলিশের পাশের তাওয়ায় দিন।

ঈশ্বর তাদের অনুরোধ রাখলেন। তাওয়া পাল্টিয়ে আমাকে ইবলিশের পাশের তাওয়ায় নিলে কাচুমাচু স্বরে ইবলিশ বল্ল- ঈশ্বর! তারচে বরং তাঁকে প্রথম তাওয়ায়ই রাখুন আমাকে দ্বিতীয় তাওয়ায়। নিজ পিতাকে হত্যার মতো পাপ করার ধৃষ্টতা এমনকি কোনকালে আমিও দেখাইনি! 






চুমু

.

ত্রপার পর্দা চিড়ে বেরিয়ে এসো, মাঙছি অনুরোধ;

একটা চুমুর বিনিময়ে লিখে দেবো বাপের তাবৎ সম্পদ।






লাশ

.

আজ আমার মৃত্যু হয়েছে কোন এক অজানা রোগে,

জানাজা পড়েছি সবে নিয়ে যাবো গোড়ে।

কেউ আনে বাঁশ আর কেউ মাটি খোড়ে,

আমার লাশটা আমার নিজের কাঁধে-

আর কিছুবাদে তারে রাখিবো কবরে।

মাথায় আমার একটা চিন্তা ঘোরে;

এত একা কেন লাগে শালা মরণের পরে?

শাহাদৎ কালিমা মুখে, চলি দিতে মাটি

এই শালা নালায়েক, ইক্বরা বিসমি!

দাফন শেষে কবরে একা বসে ভাবি;

মাগীবাজ লাশটা শেয়ালে খাবে কি?






চুমু

.

কার্নিশে বিষন্ন প্রেমিকের ঠোঁট

হা করে আছে কাকের মতোন

বাহবা কুড়ানোর চেয়ে কমরেড

যুদ্ধ-বিগ্রহ কিংবা দ্বন্দ্বের চেয়ে

"একটা চুমুই শ্রেয় মোদিরার মতোন''



ভুলে যায়

.

পৃথিবী ভুলেছে তোমায়, ভুলেছে পাহাড়

ভুলে যাওয়া টুকটাক স্মৃতির আহার।

এঘর ভুলেছে ওঘর, ছেলে ভুলে মা

 চুমুগুলো ভুলে,  গেছে  চলে প্রেমিকা

ভাই গেছে ভাই ভুলে, বোনও গেছে ভুলে 

তারারা আকাশ ভুলে খসে পরে খুলে

গাছ ভুলে গিয়ে মাটি আকাশে তাকায়

বিগব্যাং ভুলে আকাশ শূণ্যে ঝাপায়।

মাছ গেলে পথ ভুলে চলে আসে কূলে

জেলে ভুলে জাল ছুড়ে নিয়ে আসে তুলে

পাখিরা মিস্টি সুরে গান গেছে ভুলে

ফুল  ভুলে আমগাছ শূণ্য মুকুলে।

এভাবে ভুলেছে সবে- ভাই, বাপ, মা

ভেবে দেখো ভালো করে তুমি কারো না।

কারো তরে খোদাতালা রাখেনি কারে

একা হও একা ভালো একাকী ঘরে

রোডে হাঁটো একাএকা, একা কবরে

দশমাস একা ছিলে মাতৃ জঠরে

তবুও বেদনা বুকে যদি লাগে একাএকা

খুঁজে নিও ভুল করে প্রাণপ্রিয় সখা

একদিন তোমাকে সবে ভুলে গেলে

নিজেকে খুঁজে পাবে শূণ্যে তাকালে।



মিস

.

আপনার হয়েছে স্টমাক ক্যানসার

আজ ছত্রিশ দিন ছুঁলো। 

একটা ক্যোমোর পরই পরতে শুরু করেছে চুল

দাঁতগুলো নড়বড়ে হয়ে গেছে

নিস্তেজ দেহ লোহার খাটে

বের হয়ে আসছে স্কলেটন,

কিছু খেলে তা উগড়ে ফেলে দেন!

বাসায় আসার দিন

ডাক্তার বলেছেন, আপনি বাঁচবেন, একটু নিয়ম করে শুধু অষুধটা খাবেন। 

হ্যাঁ বাঁচতে হলে অষুধ মিস করবেন না

বাঁচতে চান আর তাই অষুধ মিস করেন না 

তবুও মাঝেমাঝে মিস হয়ে যায়!

আজ বিকেলের অষুধটা মিস হওয়ায় চিন্তিত

দেহ ঝিম ধরে যায়, আপনি বিস্মিত!

এখন বুঝতে পারছেন, সামিরার মৃত্যুর পর ওঁর ভালোবাসা বুকে নিয়ে

 একাএকা বেঁচে থাকার কোন মানেই ছিলোনা, এসব আবেগ ভূয়া!

মানুষের একা থাকা বোকামী

তারচে বড় বোকামী কারো ভালোবাসা বুকে নিয়ে একা থেকে যাওয়া।


আপনি পরে আছেন পৃথিবীর কোন নিস্তব্ধ কোটরে

এখানে আপনি বিমারে

যেখানে কেউ আপনার খবর জানেনা

কোথায় আছেন আপনি, কেমন কাটাচ্ছেন দিন 

কিবা খাওয়া হচ্ছে, আদৌ খাচ্ছেন কিনা

কেউ খবর রাখেনা!

একটা শ্বাসের সাথে লড়াই করে

প্রতিদিন খাবি খাচ্ছেন মৃত্যুর দুয়ারে।

আপনি মৃত্যুর সাথে রোজ পাঞ্জা লড়ে-

আসবে বোলে মৃত্যু এমন ডরে,

বাহুতক গেড়েছেন নরম কাদায়;

আপনি নিজেই জানেন,  মানুষ এখানে সবচে অসহায়!


খারাপ লাগছে, কষ্ট হচ্ছে, কাঁদতে চাচ্ছেন- কাঁদতে যাচ্ছেন

দৌঁড়াচ্ছেন ডাক্তারের করুণ চেম্বারে

আপনি মৃত্যুর দুআরে খাবি খাচ্ছেন!  

 কেঁদেই ফেলেছেন- হায় কেউ খোঁজ নেয়নি!

মানুষ বড়ই স্বার্থপর; তারা স্বার্থপর নিজের কাছেই  নিজে;

 নিজ প্রোয়োজনে বিক্রি করে নিজের ধমনী, বাবার কিডনি!


আরো ভাবছেন, আজ আপনি জীবিত

তবুও কেমন ভুলে বসে আছে সবাই!

আশ্চর্যই লাগে, একসাথে গোল্লায় যাওয়া বন্ধুটাও একটু সময় করে

আপনাকে দেখতে আসতে পারেনা!

সবাইকে জানানো হয়েছিলো। 

তাঁরা বিজি

পৃথিবীর রাস্তা, গাড়ি, মাটি, নদী সবাই বিজি

আর একসময় পৃথিবীর সমস্ত কুকুরগুলোও বিজি হয়ে যায়। 

আপনি ভালোই জানেন এসব।


তবুও ঈশ্বরপ্রদত্ত হৃদয় তাদের বিজিত্ব মানতে নারাজ; বারংবার প্রশ্ন করে, কেন অামার আপন লোকগুলো বিজি হবে?

তাদের বিজিত্ব মানা যায় না। ইচ্ছাপূর্বক,

কেন কী কারণে তাঁরা আমাকে একটুও দেখতে আসবেনা? 

এসব ফালতু প্রশ্ন- আপাতত বিরামহীন আপনাকে পীড়া দেবে। 

অথচ হৃদয়, এমন যুক্তিতে কখনো আটকে থাকেনা-

একদিন সবাই'ই বিজি ছিলো।

এই রুমটা আপনার বাবার, যিনি কিছু বছর আগেও আপনাকে মিস করতেন। 


০৪/১০/২০১৯




গাফ (Guff) 

.

পাহাড় কেটেছো তুমি 

মাটির নীডে

ফিকে হয়ে যায় চোখ

দেহের ক্ষিদে।

যে পাহাড় কেটেছো

সে পাহাড় জানে

এখন মাটির টানে 

পাহাড়ি উদ্যানে

ক্ষয়ে পরে জলধারে

খাড়াখাড়া স্রোতে

স্রোত চলে পাহাড়ের

ঠিক বিপরীতে।

ঠেকাও সে জল তুমি

পেয়ালা ভরা

সাগরে লুকায়ে যত

 মোহরের ঘরা

তুমি কি পাবে সে ধন

করে আরাধনা?

ভালো করে ভালো রাখে

যে যার সোনা। 

মানুষ কেবলই জীব

মাটির মে-ছেলে

জল পরে জল বয়

ঝর্নার কোলে।

মেহমান রূপে জানি—

ব্যাসিক কাহিনী 

ইজিপ্টের রংমহলে

ক্ষুদে সে বাহিনী ;

নগ্ন হাঁটেনি তাঁরা

লজ্জার চাদরে

 বেশ্যা বুকে রাখেনি

  পরম আদরে।

পিরামিডে মমি করা 

যেসব মাগী

নেফারতিতির মতো

সেসব ছাগী—

হৃদখুলে দেখো হেথা,

কিসব লাগানো

ক্লিওপেট্রার বুকে 

আপেল লুকানো।

অ্যান্টনি ভেবেছিলো 

তীর পেয়ে গেছে

ক্লিও-ব্রা ঝুলে ছিলো

ছাতিমের গাছে;

পিরামিডে লুকানো

যেসব ভায়াগ্রা

চলো চুষে ঘুরে দেখি

মমতাজের আগ্রা। 






বয়েস

.

 বয়েস যত বেড়েছে- শিখেছি, নিজের কাছে নিজে

অহং তাপে তপ্ত মগজ; ঠান্ডা করেছি ফ্রীজে।

‘অর্থ সকল অনর্থই’ প্রভার্বের এক জালে

  অর্থ ছিলো দান করে সব, গাব দিয়েছি বালে। 

গান করেছি মাস্টার মশাই'র সপ্ত সুরের তালে

মাছ শিকারে ফেঁসেছি রোজ নিজের পাতা জালে।

আমি কখনো পাইনি কাউকে ট্রেনের সিটে পাশে

ভ্রমণ যত করেছি প্রায়ই একলা একটা বাসে।

কখনো চাঁদে কাউকে দেখিনি বুড়ির কেসটা ভূয়া

বাল্যে শুরু মিথ্যে জানার , মেঘ কি কেবল ধোঁয়া? 

আকাশ কেবল শূণ্য নাকি, আমার বাড়ি কই?

আমি কি এই গ্যালাক্সির এক আদম সানি নই?




আমি কখনো পার্কে যাইনি ধরিনি কারো হাত

আমার মাথায় লেপ্টে ছিলো ছয়শ অপবাদ!

নরম করে গরম হলেই ডাইনোসরের সুরে,

আমি কোথায় ঘুরতে যেতাম নিজের পাখায় উড়ে।

একাই যেতাম যেথায় যেমন একাই খেতাম মদ

নষ্ট করিনি পরের ছেলে তবুও সজল বদ!

পৃথিবী আমায় শিক্ষা দিয়েছে, পরতে পরতে ধোকা

 চেহারায় সব ডিপেন্ডেবল চুল পাকলেই কাকা

কাঁচা-পাকার এই খেলাতে আমিও খেলাই মাঠে

বয়েস যত বেড়েছে- জেনেছি; মুরব্বিদের খাটে

পয়সা হলে লাফ দিয়ে সব মানসম্মান ওঠে। 

আমিও আজ ড্যান্স করবো কণ্ঠে তুলবো সুর

বেতাল তালে হেলে দেবো মিল্কিওয়ে ট্যুর।

দারুণভাবে মাতাল হলে চোখ বুঝলেই ঘুম যাবো;

আমায় যেবা শান্তি দাওনি একদিন তাঁর গোশত খাবো!




নূহার মা

.


নূহার মা চাঁদে গেছেন

কবে ফিরবেন বলে যাননি।

সবাইকে জিজ্ঞেস করেও কোন উত্তর পায়নি ও;

প্রথমে জিজ্ঞেস করেছিলো বাবাকে

এরপর দাদাকে

প্রত্যেকে ঝিম মেরে 'থ'।

নানী বলেছিলেন; যদি নূহা ঘুমিয়ে যায়; আর সুন্দর স্বপ্ন দেখে; তবেই ফিরতে পারে মা। 


নূহা প্রত্যহ রাতে ঘুমানোর পর্যন্ত আশাবাদী; আজ রাতে ঘুমের পরেই হয়তো ফিরে আসবে মা।

রাতে ঘুমানোর পরে ভালো স্বপ্ন দেখে।


সাঁইত্রিশ লাখ তারা

আর কয়েকটি জোনাকি

একটা ঘোড়া

তার দুটি পাখা

মানুষের মতো গান করে 

দাতঁ বের করে হাসে

দৌঁড়ায় আর দৌঁড়ায়

না সম্ভবত ওড়ে

পাহাড়ে পাহাড়ে

শাহবাগ চত্বরে

এরপর সরাসরি

চাঁদের গভীরে।

ঐ তো মা!

নূহা,

ঘোড়াটার পিঠে। 

ঘোড়াটা হাসে

না মা হাসে

না কেউই হাসছে না

ঘোড়াটা বিমর্ষ

ওঁর একটা ডানা ভেঙে গ্যাছে কি করে?

উড়তে পারছে না 

মা ক্রমশ দূরে সড়ে যাচ্ছে

চুষে খাচ্ছে ব্ল্যাক হোল 

মায়ের চেহারা

আবছা হয়ে যাচ্ছে সবুজ কার্পেটে

ধুলোও নেই, ধোঁয়াও নেই

গ্যাসও বায়বীয়তা নেই

কুয়াশা বা মেঘ নেই

মা, তোমাকে এখন অস্পষ্ট লাগে

এখন কি রাত? নাকি দুপুর?

ককপিটে লেজ নাড়ছে রাহুর কুকুর!

— তবে কি হারিয়ে গেলো? 

কৃষ্ণগহ্বরে লুকিয়ে গেলো?

মা! মা! তুমি ফিরে এসো

আমার মা!


নূহা চোখ খোলে,

ওঁর পাশে বাড়ির আদুড়ে পুষি

হাতে ছোঁয় পা

পুষি হাসে; গুডমর্নিং নূহা!

নূহা কোন কথা বলেনি; ওঁর অপেক্ষা করতে হবে, দীর্ঘ অপেক্ষা! 

 আবার ঘুমানো পর্যন্ত অপেক্ষা; মা না আসা পর্যন্ত সংবিধিবদ্ধ অপেক্ষা ওঁর ললাটে দ্রষ্টব্য হয়ে ঝুলে থাকবে — তাই মা'কে কৃষ্ণগহ্বর থেকে ওঁর উদ্ধার করতেই হবে!




আমার চেহারা খারাপ

.

আমি যে কুৎসিত কদাকার, সর্বপ্রথম বলেছিলেন যিনি ; শ্রদ্ধায় মাথানত করি - তিনি আমার ”শ্রাদ্ধীয়” বাপ।

আমার খারাপ লাগে৷ একাধিক কুকুর সঙ্গমরত আমি তাদের দিকে তাকাই না কখনো, নিজের খোমাটা আয়নায় দেখিনি এখনো, ঐত্তোর মায়রে বাপ, আমার চেহারা খারাপ!

আমি আকাশে তাকাইনা কখনো বিষদগার করি হে আকাশ তোমার পাখি মাইন্ড করে এরপর তারা তরপায়; ফেরেশতা লানত পাঠায় মেঘে বিদ্যুৎ চমকায় 

বৃষ্টি পরে

আর গুনগুন জোনাকি গায়

ঐত্তোর মায়রে বাপ, আমার চেহারা খারাপ!


অতঃপর আরো শোনো—

আমি রাস্তায় হাঁটিনা আমার ভয়, পৃথিবী আমারে গালি দ্যায় ; দম বন্ধ হয়ে যায়, কেমন কেমন সবাই যেন কেমন করে তাকায়! আমি জানি, এসব আমরই পাপ; ঐত্তোর মায়রে বাপ, আমার চেহারা খারাপ৷ 


কিছু ভালো লাগেনা; আবার চুপসে যাই; প্যাকেটে একটা সিগারেটও নাই; দোকানে কিভাবে যাবো? সিগারেট কিভাবে পাবো? কে জানে! লোকজন তাকায়, আজ আমার জন্য সবই আজাব; এসব আমরই পাপ; দোকানে যাবোনা ওরা হাসে, আমি জানি এর কারণ, কুৎসিত পৃথিবীতে আমি এগিয়ে এক ধাপ, আমার চেহারা খারাপ।


স্কুলে কিছুদিন, মাদ্রাসা পাঁচদিন। আমার কোন গ্রন্থগত বিদ্যা নেই; বাবা পুড়িয়েছিলো সকল পড়ার বই; খাতা, পেন্সিল ড্রয়িং পেপারটা; যেহেতু আমার কোন চেহারা নাই

গড়নে কোন আর্ট খুঁজে পাইনাই

বাবা আমায় নিয়ে কখনো স্বপ্ন দেখেনি

আমার ভেতরে কখনো কান পাতেনি

 তক্তপোশে বড় ভাইয়ের দেয়া স্কুল-শার্টটা। আমি বাঁধা দেই-বাবা তবুও পোড়ে, বলে, কি হবে পড়ে? ঝলসানো মুখ দিয়ে চাকুরী হবেনা, লুক চাই লুক, হাইট চাই, বডি চাই, সব একশতে একশ চাই৷ অথচ আমি জানি, এসব আমার কিছুই নাই। আমি আর বাঁধা দেইনাই, যা করে করুক না বাপ; আমার কিছুই হবেনা জানি, আমার চেহারা খারাপ।




Post a Comment

0 Comments