যদিও এখন পিডিএফ এর যুগ এসে বইয়ের জগতে ভাগ বসাচ্ছে, তবু কাগজের বইয়ের কদর বইয়ের মতই। একটি নতুন বইয়ের মলাট খুললে যে পরিচিত একটি ঘ্রাণ বের হয়,আর পাতা হাতের আঙ্গুল দিয়ে উল্টয়ে পড়ার যে আনন্দটুকু পাওয়া যায়, সে বইটা অর্ধেক পড়ে বালিশের নিচে রেখে ঘুমানোয় যে আনন্দটুকু পাওয়া যায়, সেটি হাজারটা পিডিএফ বই মেমরী কার্ডে রেখে ঘুরলেও সেরকম অনুভূতি পাওয়া সম্ভব নয়। সম্ভব হয়েছে বলেও জানা নেই। আমি পিডিএফ এর বিরোধিতা করে কথাগুলো বলছিনা। তবে কথাগুলো সত্য। সেজন্যেই এখনো অনেক বইপোকাদের ঘরে বই এর সম্রাজ্য! গ্রুপে প্রায় প্রতিদিনই এরকম সম্রাজ্যের ছবি সে সকল সম্রাজ্যের মালিকেরা দিয়ে থাকেন । যাক আর কথা না বাড়াই, যে বিষয় নিয়ে এই পোস্ট এবার সে প্রসঙ্গে আসি। যাদের বিপুল পরিমান বই সংগ্রহে আছে তারা বরাবরই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকেন যে বই গুলো কিভাবে সুস্থ সবল রাখা যায়। কারন অনেক বই সংগ্রহে থাকলে বইয়ের যত্ন নেয়াটিও একটু সমস্যা হবে যায়। এই পোস্ট সেটি নিয়েই। অনেক তথ্য নেট থেকে সংগৃহীত, আবার অনেক তথ্য আমি নিজে যোগ করেছি। সব মিলিয়ে চেষ্টা করেছি সবার যেন উপকারে আসে সেরকম করে পোস্টটি লিখার... । যারা পার্সোনাল লাইব্রেরী বানাবার কথা ভাবছেন তারাও উপকৃত হবেন আশা করি...
স্থান নির্বাচন ঘরের যে কোন জায়গায় বই রাখা গেলেও নিরিবিলি এবং শান্ত পরিবেশ রয়েছে এমন স্থান নির্বাচনের চেষ্টা করতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় পাঠাগারের জন্য আলাদা এটি কক্ষের ব্যবস্থা করতে পারলে। সেখানে যাতে বসে পড়ার ব্যবস্থা থাকে সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। আর নির্বাচিত ঘরটি আর্দ্র না হলে বেশী ভাল। কারন এতে বই স্যাতস্যাতে হয়ে যাবার আশঙ্কা থাকে।
বই রাখা • বই রাখতে আলমারি বা বুক শেলফ তো লাগবেই। বড় তাকে ছোট বই রাখলে জায়গার অনেক অপচয় হয় তাই বইয়ের ধরন বুঝে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বুক শেলফের ব্যবস্থা করতে হবে। • সরাসরি সূর্যের আলো বা তীব্র আলো ব্লিচিং বা বিরঞ্জন ক্রিয়ার জন্য দায়ী। কাজেই বইয়ে সংগ্রহশালাটি উজ্জ্বল আলো থেকে দূরে রাখতে হবে। • ধূলাবালি এড়ানোর জন্য বেশি খোলামেলা কক্ষ পরিহার করা দরকার। প্রয়োজনে আলো ও ধূলাবালি এড়ানোর জন্য জানালা বন্ধ রাখতে হবে। • পোকামাকড় এড়ানোর জন্য নিমপাতা, ন্যাপথালিনসহ অন্য কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে আঙ্গুলে লালা লাগিয়ে পাতা উল্টানো যাবে না।
বই সাজানো • বই বিষয়ভিত্তিকভাবে সাজানো যেতে পারে। আবার সংগ্রহের সময় বা লেখকের নামানুসারে সাজানো যেতে পারে। • যে তাকে যে ধরনের বই রাখবেন সেটি নাম একটি কাগজে লিখে (যেমন কবিতা, উপন্যাস, ছোটগল্প, সমগ্র ইত্যাদি) তাকের গায়ে এটে দিতে পারেন। এতে বই খুজে পেতে সুবিধা হবে।
তাপমাত্রা ও আদ্রতা তাপমাত্রা ২১ ডিগ্রী সে. এর ওপরে এবং আর্দ্রতা ৬৫% এর বেশি হলে ছত্রাক আক্রমণের সম্ভাবনা বাড়ে। আবার আর্দ্রতা খুব কম হলে বইয়ের পাতা মচমচে হয়ে ভেঙ্গে যেতে পারে। যে কক্ষে বই রাখা হচ্ছে সে কক্ষের তাপমাত্রা ১৬-২১ ডিগ্রী সে. এর মধ্যে থাকা উচিত। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র থাকলে ভালো। তবে ২৫ ডিগ্রী হচ্ছে Standard Room Temperature । সে হিসেবে ২৫ ডিগ্রী থাকলেও ক্ষতি নেই
বইয়ের যত্ন • আমাদের অনেকেরই বইয়ের পাতা মোড়ানো বা ভাঁজ করার অভ্যাস আছে, এটা ক্ষতিকর। বাজারে আঠাযুক্ত বুকমার্ক কিনতে পাওয়া যায়, এগুলো কিংবা কাগজের টুকরো ব্যবহার করা যেতে পারে।(অনেকে নিজেই কাগজ দিয়ে বুকমার্ক বানিয়ে থাকেন । সেগুলো ব্যাবহার করা গেলে আরো ভাল। বুকমার্ক নিয়ে বিস্তারিত অন্য কোনদিন পোস্ট দেয়ার চেষ্টা করব ) • বিছানায় শুয়ে বা আধা শোয়া অবস্থায় বই পড়লে যাতে বাঁধাই এর কোন ক্ষতি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
বই পড়া • পুরো কক্ষে উজ্জ্বল আলোর ব্যবস্থা না করে কেবল টেবিলে টেবিল ল্যাম্পের ব্যবস্থা করলে বইয়ের ক্ষতি কম হবে। • আরামদায়ক পাঠের জন্য চেয়ার-টেবিলের উচ্চতার অনুপাত গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য উচ্চতা পরিবর্তন করা যায় এমন চেয়ার হলে ভালো।
পোকা আক্রান্ত হলে • পোকা আক্রান্ত বই দ্রুত আলাদা করতে হবে যাতে অন্য বই আক্রান্ত না হয়। • আক্রান্ত বইটি রোদে দিয়ে পোকামুক্ত করার চেষ্টা করতে হবে। প্লাস্টিক প্যাকেটে মুড়ে ডিপ ফ্রিজে রাখলেও পোকা মরে যায়।
আরো কিছু ব্যাপার যোগ করা যেত। তবে পোস্ট বেশী দীর্ঘায়িত হবে বলে সেগুলো এড়িয়েই যাচ্ছি। চেষ্টা করেছি যে বিষয়গুলো মোটামোটি সবার জানাটা জরুরী সেগুলো দেয়ার। আশা করি কিছুটা হলেও সবাই উপকৃত হবেন । হ্যাপী রিডিং... আর সবার জন্য ঈদ মোবারক..
0 Comments