Ticker

50/recent/ticker-posts

নূরুলদিনের সারা জীবন

নূরলদীনের সারাজীবন

 - সৈয়দ শামসুল হক

নূরলদীনের সারাজীবন jpg
ডাউনলোড লিংক:


সৈয়দ শামসুল হকের দ্বিতীয় কাব্যনাট্য 'নূরলদীনের সারাজীবন'_ যে কোনো বিবেচনায় এটি বাংলা কাব্যনাট্য ধারায় একটি অনন্য সংযোজন। এই রচনায় লেখকের পরিশ্রম ও মেধা সন্দেহাতীতভাবে লক্ষ্য করা যায়। একটি জনপদের সাবঅলর্টান ইতিহাস সংগঠিত করবার এই শিল্পসম্মত প্রয়াসকে কেবল উত্তর-ঔপনিবেশিক চেতনা দিয়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব। ব্রিটিশের বিরুদ্ধে এদেশে কতরকম আন্দোলন যে সংগঠিত হয়েছিল তার সবটা এখনো আমাদের জানা নেই। কিন্তু এই সব আন্দোলনও বিদ্রোহের লক্ষ্য ছিল না মসনদ। 'মুই নবাব না হবার চাঁও। মুই সিংহাসন না চাঁও।' রাজা যায রাজা আসে_ তাতে শ্রমজীবী মানুষের খুব একটা মাথাব্যথা নেই। কিন্তু বেঁচে থাকার সর্বশেষ গ্রাসটুকু যখন অনিশ্চিত হয়ে পড়ে; সভ্যের বর্বর লোভ যখন দুর্দমনীয় হয়ে পড়ে তখন রুখে না দাঁড়ানোর কোনো উপায় থাকে না। আর এই প্রতিবাদকে ক্ষমতাসীন বিশেষ করে ঔপনিবেশিক শাসকরা দস্যুগিরি, বদমায়েশী উল্লেখ করে থাকে। Source: amarboi.com

নূরুলদিনের সারা জীবন

নিলক্ষা আকাশ নীল, হাজার হাজার তারা ঐ নীলে অগণিত আর

নিচে গ্রাম, গঞ্জ, হাট, জনপদ, লোকালয় আছে ঊনসত্তর হাজার।
ধবলদুধের মতো জ্যোৎস্না তার ঢালিতেছে চাঁদ – পূর্ণিমার।
নষ্ট খেত, নষ্ট মাঠ, নদী নষ্ট, বীজ নষ্ট, বড় নষ্ট যখন সংসার
তখন হঠাৎ কেন দেখা দেয় নিলক্ষার নীলে তীব্র শিস
দিয়ে এত বড় চাঁদ?
অতি অকস্মাৎ
স্তব্ধতার দেহ ছিঁড়ে কোন ধ্বনি? কোন শব্দ? কিসের প্রপাত?
গোল হয়ে আসুন সকলে,
ঘন হয়ে আসুন সকলে,
আমার মিনতি আজ স্থির হয়ে বসুন সকলে।
অতীত হঠাৎ হাতে হানা দেয় মরা আঙিনায়।
নূরলদীনের বাড়ি রংপুরে যে ছিল,
রংপুরে নূরলদীন একদিন ডাক দিয়েছিল
১১৮৯ সনে।
আবার বাংলার বুঝি পড়ে যায় মনে,
নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়
যখন শকুন নেমে আসে এই সোনার বাংলায়;
নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়
যখন আমার দেশ ছেয়ে যায় দালালেরই আলখাল্লায়;
নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়
যখন আমার স্বপ্ন লুট হয়ে যায়;
নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়
যখন আমার কণ্ঠ বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে যায়;
নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়
যখন আমারই দেশে এ আমার দেহ থেকে রক্ত ঝরে যায়
ইতিহাসে, প্রতিটি পৃষ্ঠায়।
আসুন, আসুন তবে, আজ এই প্রশস্ত প্রান্তরে;
যখন স্মৃতির দুধ জ্যোৎস্নার সাথে ঝরে পড়ে,
তখন কে থাকে ঘুমে? কে থাকে ভেতরে?
কে একা নিঃসঙ্গ বসে অশ্রুপাত করে?
সমস্ত নদীর অশ্রু অবশেষে ব্রহ্মপূত্রে মেশে।
নূরলদীনের কথা যেন সারা দেশে
পাহাড়ী ঢলের মতো নেমে এসে সমস্ত ভাসায়,
অভাগা মানুষ যেন জেগে ওঠে আবার এ আশায়
যে, আবার নূরলদীন একদিন আসিবে বাংলায়,
আবার নূরলদীন একদিন কাল পূর্ণিমায়
দিবে ডাক,”জাগো, বাহে, কোনঠে সবায়?


Post a Comment

0 Comments