Ticker

50/recent/ticker-posts

বহুব্রীহি PDF

Bohubrihi jpg

বই- বহুব্রীহি 

লেখক- হুমায়ূন আহমেদ

প্রকাশনী- আফসার ব্রাদার্স 
পৃষ্ঠা সংখ্যা - ১৯২ 
মুদ্রিত মূল্য - ২১৩৳
Download: Click Here
ব্যক্তিগত রেটিং - ৯.৬/১০


রিভিউ By রোদসী জান্নাত

আমার এক বন্ধু একদিন জিজ্ঞেস করলো, বহুব্রীহি বইটা পড়েছি কি না? আমি বইটার নাম শুনে থাকলেও কোন কারণে পড়া হয়ে উঠেনি। অগত্যা 'না' বললাম। সে আমার দিকে কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থেকে বলল, "এইটা তুমি কী করলা বান্ধবী!এই অস্থির আর মাস্টরিড বইটা পড়ো নাই এখনো! কী করলা জীবনে?"
আমি বুঝলাম জীবনে অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি। সেদিন রুমে এসে কাকতালীয় ভাবে একজনের কাছে দেখি বইটা আছে। পড়লাম। আর শেষ করে ভাবলাম বন্ধু আমার ঠিকই বলেছিল। বইটা আসলেই অস্থির।
'নিরিবিলি' নামক বাড়ির কর্তা সোবহান সাহেব, সম্প্রতি চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। সারাদিন বাসায় থাকেন আর তেমন কোন কাজ না থাকায় মেজাজ খারাপ করেন। মাঝেমধ্যে অকারণে উত্তেজিত হয়ে পড়েন।তার দুটো মেয়ে, মিলু আর বিলু। অবসর সময় কাটানোর পন্থা হিসেবে তিনি 'দেশ ও দেশের মানুষ' নিয়ে চিন্তা করেন। দরিদ্র মানুষের ক্ষুধার কথা চিন্তা করে কষ্ট পান এবং একদিন খাওয়া বন্ধ রাখেন। ফলাফল : তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।
মনসুর, সহজসরল একজন তরুণ যুবক এবং ডাক্তার। সোবহান সাহেব অসুস্থ হলে তার প্রেশার মাপার জন্য মনসুরকে খবর দিয়ে আনা হয়। এসেই তিনি সোবহান সাহেবের ছোট মেয়ে মিলির প্রেমে হোঁচট খেয়ে পড়েন। সেদিনের পর থেকে ডাক্তার সাহেব এ বাড়িতে আসার অজুহাত খোঁজেন,পেয়েও যান। একপর্যায়ে সাহস করে মিলিকে ভালোবাসার কথা বলতে যেয়ে ভুলে বড়বোন বিলুকে বলে ফেলে.....
সোবহান সাহেবের শালা ফরিদ। সোবহান সাহেব যাকে অপদার্থ বলে জানেন। কিন্তু ফরিদ নিজেকে একজন বুদ্ধিমান লোক হিসেবে জানে।নিজের সম্পর্কে তার ধারণা বেশ উঁচু পর্যায়ে। কাজের লোক কাদের ছাড়া কেউ তাকে পাত্তা দেয় না।
আনিস সাহেব, একজন লেখক। দুটো সন্তান রেখে স্ত্রী মারা যাওয়ায় সন্তানদের দায়িত্ব তার ঘাড়ে বর্তায়। সোবহান সাহেবের বাসায় ভাড়াটিয়া হয়ে আসেন। বিলু একপর্যায়ে এই আনিস সাহেবের প্রেমে পড়ে যায়।
সোবহান সাহেব ডাঃমনসুরকে বেশ পছন্দ করেন। তার বাড়িতে আশ্রিতা এক অনাত্মীয়া পুতুলের জন্য পাত্র হিসেবে মনসুরকে নির্বাচন করেন। কিন্তু পুতুল আনিস সাহেবকে ভালোবাসে। মনসুর মিলুকে ভালোবাসে। আনিস সাহেব ভালোবাসেন বিলুকে। সম্পর্কের গোলকধাঁধা থেকে কি তারা বের হতে পারবেন?
#পাঠ_প্রতিক্রিয়া:
বইটা যে পড়তে বলেছিল আর যার থেকে বইটা নিয়ে পড়েছিলাম, এ দু'জন বান্দাকে আমি হাজারটা ধন্যবাদ দিছি। মানে কী বলব! এত মজার কেন? মন খারাপ করে বসে থাকা কোন বন্ধুকে বইটা ধরিয়ে দিন,আপনাতেই মন খারাপ গায়েব হয়ে যাবে।আর পড়তে শুরু করলে না শেষ করে উঠতেই ইচ্ছে করবে না।
হুমায়ূন স্যার বলেছেন, "এই লেখাটি আমি গভীর আগ্রহ ও আনন্দ নিয়ে লিখেছি সেই আনন্দের ভগ্নাংশও যদি পাঠক পাঠিকাদের কাছে পৌঁছাতে পারি তাহলেই আমার সকল শ্রম সার্থক হয়েছে ধরে নেব "
লেখক যে শতভাগ সার্থক তা না বললেও বইটা যে পড়েছে সে অবশ্যই জানে। মানে এত দারুণ কীভাবে লিখতে পারে একটা মানুষ?
অন্যের বই হলেও শুধু আমার মনে হচ্ছিল বইটা যেন তাড়াতাড়ি শেষ না হয়ে যায়। ১৯২ পৃষ্ঠায় এসে মন খারাপ হলো। হুমায়ূন স্যার'র অন্যান্য প্রায় বই শেষ হয়ে যে মনখারাপটা হয় সেই মনখারাপ না। এই মনখারাপ আনন্দের। আর কয়েকটা পৃষ্ঠা সংখ্যা বাড়ালে কী এমন হতো!
এই বইয়ের একটা বিশেষ অংশ আছে যা আমার মোস্ট ফেবারিট। তা হচ্ছে ফরিদ সাহেবের জোগাড় করা টিয়া পাখি যখন বলে,ক'তে কাদের মোল্লা "তুই রাজাকার"। ফরিদ অকর্মণ্য হলেও একটা কাজের মতো কাজ করে দেখিয়েছে।
পক্ষপাতিত্ব কি না জানিনা! এ বইয়ের সমালোচনা করা একদম সম্ভব না আমার পক্ষে।

Post a Comment

0 Comments